বিচ্ছেদের এক যুগ পরও রবার্ট প্যাটিনসন ও ক্রিস্টেন স্টুয়ার্টের প্রেম আনন্দ-বেদনার এক কাব্য

কিছু কিছু প্রেম থাকে, যেসব ভক্তদের কাছে হয়ে ওঠে অমর। বাস্তবে হয়তো প্রেমিক-প্রেমিকার পথ দুই দিকে চলে গেছে বহু আগেই। তবে ভক্তরা মন থেকে মুছতে পারেননি তাঁদের ছবি। তেমনই এক জুটি হলিউডের রবার্ট প্যাটিনসন ও ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট। তাঁদের ছবিগুলো এখন কেবলই সুখস্মৃতি। সেসবে চোখ বোলাতে বোলাতে জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।

২০০৮ সালের ২১ নভেম্বর। ‘টোয়াইলাইট’ ফ্র্যাঞ্চাইজির ভক্তদের জন্য দিনটি ছিল ক্যালেন্ডারে দাগিয়ে রাখার মতো। সেদিন মুক্তি পায় সিরিজটির প্রথম সিনেমা ‘টোয়াইলাইট’
টোয়াইলাইট ছবিতে কাজ করে সুপারস্টার এবং প্রেমিক–প্রেমিকা হয়েছিলেন ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট ও রবার্ট প্যাটিনসন
সিনেমাটি সে সময় হলিউডের ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম ব্যবসা সফল রোমান্টিক-হরর সিনেমার তকমা পায়
রাতারাতি ক্রেজ বাড়তে থাকে ‘টোয়াইলাইট’-এর
জন্ম হয় দুই তারকার—ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট ও রবার্ট প্যাটিনসন। রাতারাতি তাঁরা হয়ে ওঠেন সুপারস্টার
ক্রিস্টেন ও রবার্টের অনস্ক্রিন প্রেম আর কেবল স্ক্রিনে আটকে থাকেনি। তাঁদের অফলাইনের প্রেমের কথাও ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো
বিশ্বব্যাপী এই জুটির কোটি কোটি ভক্ত, অনুসারী তৈরি হয়ে যায়।
অনেকেই বলেন, ক্রিস্টেন ও রবার্টের মতো ‘গুডলুকিং’ জুটি আর আর কখনোই সম্ভব নয়
পরবর্তী চার বছরে একে একে মুক্তি পায় ‘টোয়াইলাইট’ ফ্র্যাঞ্চাইজির পাঁচটি সিনেমা। একটাকে ছাপিয়ে আরেকটা ব্যবসা করতে থাকে
‘টোয়াইলাইট’-ই প্রথম রোমান্টিক সিনেমা, যা সুপারহিরো সিনেমাকে ছাপিয়ে বক্স অফিস মাত করে। এই সিরিজের পাঁচটি সিনেমার মোট আয় ছাড়িয়ে গেছে ৩ দশমিক ৩৪৬ বিলিয়ন ডলার বা ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি
আর এই বক্স অফিস সফলতার পেছনে ছিল ১৮ বছরের ক্রিস্টেন ও ২২ বছরের রবার্টের তুমুল অফস্ক্রিন প্রেম
২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের হলিউডপাড়ায় এক ছাদের নিচেই থেকেছেন এই জুটি
তবে দুর্দান্ত সেই প্রেমও ফুরিয়ে যায় বছর চারেক পর। শোনা যায়, রবার্টকে ঠকিয়ে ‘স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য হান্টসম্যান’ পরিচালক রুপার্ট স্যান্ডার্সের সঙ্গে ক্রিস্টেন গড়ে তুলেছিলেন গোপন সম্পর্ক। পাপারাজ্জিরা ক্রিস্টেন ও রুপার্টের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ছড়িয়ে দিলে সারা বিশ্বের কোটি ভক্তের হৃদয় ভেঙে যায়
পরিচালক রুপার্ট সে সময় বিবাহিত। ক্রিস্টেনও ছিলেন রবার্টের সঙ্গে সম্পর্কে। উভয়েই জনসমক্ষে তাঁদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান। ২০১২ সালের অক্টোবরে রবার্টও ক্ষমা করে সম্পর্কটাকে আরেকবার সুযোগ দেন। ভক্তরা যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন। শুভকামনায় ভরে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
বলা হয়, এই পুনর্মিলন যতটা না তাঁদের নিজেদের তাগিদে ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল অর্থনৈতিক ও বাহ্যিক চাপ। কেননা তখন ‘টোয়াইলাইট সাগা: ব্রেকিং ডাউন’-এর দ্বিতীয় পর্ব ছিল মুক্তির অপেক্ষায়। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ইতিহাস লিখে বক্স অফিসে ব্যবসা করে এই সিনেমা। তবে তাতে ঠেকানো যায়নি ক্রিস্টেন ও রবার্টের বিচ্ছেদ
২০১৩ সালের মার্চে ক্রিস্টেনের ফোনে রুপার্ট স্যান্ডার্সের কিছু বার্তা দেখে রবার্ট আর সহ্য করতে পারেননি। এরপর আর এক ছাদের নিচে থাকা চলে না। এদিকে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে রুপার্ট আর তাঁর স্ত্রী লিবার্টি রসেরও বিচ্ছেদ হয়
২০১৩ সালের মে মাসে রবার্ট ও ক্রিস্টেন ঘোষণা দেন, তাঁরা পাকাপাকিভাবে আলাদা হয়ে গেছেন। আর জোড়া লাগার কোনো সম্ভাবনা নেই। এমনকি তাঁদের আর কখনো স্ক্রিনেও একসঙ্গে দেখা যাবে না বলে জানিয়ে দেন
এ ঘটনায় ভীষণ ভেঙে পড়েন ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট। নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কাজ থেকে বিরতি নেন। বিচ্ছেদের বছর দুয়েক পরও ক্রিস্টেন ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’কে বলেন, ‘আমার প্রথম প্রেম ভেঙে গেল। অনেক দিন পর্যন্ত মনে হয়েছিল আমি মৃত। যে চলে গেছে, সে আমার ভেতরের গভীরতম টুকরা নিয়েই গেছে। আমার পক্ষে নতুন সম্পর্কে জড়ানো কঠিন, খুবই কঠিন’
কথায় বলে, সময়ে মানুষ সেরে ওঠে। ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট ২০২৫ সালে চিত্রনাট্যকার ডিলান মেয়ারের সঙ্গে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন। অন্যদিকে রবার্ট প্যাটিনসন ২০১৮ সাল থেকে আছেন সুকি ওয়াটারহাউসের সঙ্গে। এই জুটি গোপনে বাগ্‌দান সেরেছেন, আর ২০২৪ সালের মার্চ মাসে তাঁদের প্রথম কন্যাকে স্বাগত জানিয়েছেন
এই ছবিগুলো ভক্তদের জন্য কেবলই নস্টালজিয়া
এখনো ছবিগুলো অবচেতন মনে ভক্তদের হৃদয়ে জাগায় প্রথম প্রেমের অনুভূতি আর বিচ্ছেদের সূক্ষ্ম এক তীব্র হাহাকার

লেখা: জিনাত শারমিন

সূত্র: ভ্যানিটি ফেয়ার ও ভ্যারাইটি