শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা

জুলাই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন ট্রাইব্যুনাল

রাজনীতির মঞ্চে চার দশকের বেশি বিচরণ, টানা দেড় দশকের বেশি সময় ধরে কর্তৃত্ববাদী শাসন, এরপর জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা এখন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। বাংলাদেশে রাষ্ট্র কিংবা সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালনকারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত হলেন।

জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে। পাঁচ বছর কারাদণ্ডাদেশ হয়েছে বাকি আসামি সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের।

৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে এই রায় হয়। অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে ওঠেন। এখনো সেখানেই রয়েছেন তিনি। পলাতক থাকায় এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ তিনি পাচ্ছেন না বলে ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন।

উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য শেখ হাসিনাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণের নির্দেশসহ চানখাঁরপুল ও আশুলিয়া হত্যার অপরাধে তাঁকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড।

দেশে এখন আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পরিচালনায় রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। দলটির কোনো সক্রিয় তৎপরতা না থাকলেও এই রায় ঘিরে অনলাইনে ‘শাটডাউন’ এর কর্মসূচির প্রচার চালিয়েছিল তারা। তার মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে হাতবোমা হামলা ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা ঘটছিল ১৩ নভেম্বর থেকেই।

অন্যদিকে শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় উল্লাস। এই রায়কে ন্যায়বিচার বলেছে বিএনপি। জুলাই অভ্যুত্থানকারীদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও বলেছে, শেখ হাসিনার উপযুক্ত বিচারই হয়েছে।

শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবি চেয়ে টিএসসি এলাকায় শিক্ষার্থীদের অবস্থান। আজ সোমবার দুপুরে

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠন করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মৃত্যুদণ্ডের রায়ও এসেছিল এই আদালত থেকে।

শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এই আদালতে করতে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে। আজ সোমবার সেই ট্রাইব্যুনালে জুলাই হত্যাকাণ্ডের প্রথম মামলাটির রায় হলো। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা চলছে ট্রাইব্যুনালে। এ ছাড়া আদালত অবমাননার দায়ে তাঁকে এই ট্রাইব্যুনাল এর আগে ছয় মাসের কারাদণ্ডও দিয়েছিলেন।

এই রায়কে ন্যায়বিচার বলেছে বিএনপি। জুলাই অভ্যুত্থানকারীদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও বলেছে, শেখ হাসিনার উপযুক্ত বিচারই হয়েছে।

যে কারণে মৃত্যুদণ্ড

আজ যে মামলার রায় হয়েছে, এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।

বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সব অভিযোগেরই প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায়ের সময় এজলাসে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অন্য আইনজীবীদের পাশাপাশি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানও ছিলেন।

এর মধ্যে উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য শেখ হাসিনাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ড্র্রোন ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের অবস্থান শনাক্ত, হেলিকপ্টার ব্যবহার করে গুলি, প্রাণঘাতী গুলি ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল এবং চানখাঁরপুল ও আশুলিয়ায় গুলি করে হত্যার অপরাধে তাঁকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড।

পৃথিবীর যেকোনো আদালতে এই সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হলে আজ যেসব আসামিকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই একই শাস্তিপ্রাপ্ত হবেন।
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, চিফ প্রসিকিউটর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালকেও চানখাঁরপুল ও আশুলিয়ায় গুলি করে হত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তবে এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি, তৎকালীন পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের শাস্তি হয়েছে পাঁচ বছর কারাদণ্ড। অপরাধ প্রমাণে সহায়তা করায় তাঁর শাস্তির মাত্রা কম বলে জানিয়েছেন বিচারক।

আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তিনি জবানবন্দিতে বলেছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সরাসরি ‘লেথাল উইপন’ (মারণাস্ত্র) ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার ওই নির্দেশনা তিনি পেয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মাধ্যমে।

সাড়ে চার শ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে একাদিক্রমে পড়েন তিন বিচারক। রায়ের সময় শেখ হাসিনাসহ আসামিদের অপরাধের প্রমাণ হিসেবে আমলে নেওয়া ফোনালাপের রেকর্ড শোনানো হয়, জুলাই সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিবেদনও উপস্থাপন করা হয়।

রায়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি জুলাই শহীদদের পরিবারকে এবং আহতদের ক্ষতিপূরণ দিতেও বলা হয় রায়ে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অবস্থান। আজ সোমবার সকালে

সেনা, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবির কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় স্থাপিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে এই রায় হয়। আইনজীবীদের পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থানে আহত এবং নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের অনেক সদস্য এই রায় শুনতে আদালতে এসেছিলেন।

বিচারক শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করতেই এজলাসে উপস্থিত অনেকেই হাততালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান তখন ডায়াসে যান এবং সবাইকে ট্রাইব্যুনালের সুষ্ঠু পরিবেশ বজার রাখার অনুরোধ করেন। তারপর যখন আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ ঘোষণা করা হয়, তখন কাউকে আর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়নি।

যেকোনো ধরনের অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা বা জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে, রায়ের পর হুঁশিয়ারি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বিশ্বের যেকোনো আদালতে একই সাজা হবে: চিফ প্রসিকিউটর

এই মামলার রায় ‘সাজানো’ বলে আগে থেকেই বলে আসছিলেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে রায়ের পর ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম দাবি করেছেন, তাঁরা যে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়েছেন, পৃথিবীর যেকোনো আদালতে একই শাস্তি হতো।

তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যে ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণ এই আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে, বিশ্বের যেকোনো আদালতের স্ট্যান্ডার্ডে এই সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো উতরে যাবে এবং পৃথিবীর যেকোনো আদালতে এই সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হলে আজ যেসব আসামিকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই একই শাস্তিপ্রাপ্ত হবেন।’

ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ের প্রক্রিয়া সমাপ্ত হওয়ার পর সন্তোষ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শহীদ পরিবার, যাদের ক্ষতি কোনো কিছু দিয়ে পূরণ হবে না, তাদের সামনে অন্তত একটা ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছি। এ জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’

পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে এই মামলায় রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়েছে, একই সাজা হয়েছে আসাদুজ্জামান খানেরও, তবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের হয়েছে পাঁচ বছর কারাদণ্ড

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান সংযত থাকতে, ভারতকে আহ্বান শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়টিকে ঐতিহাসিক অভিহিত করে সর্বস্তরের জনগণকে শান্ত, সংযত ও দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ড একটি ঐতিহাসিক রায়। এই রায়ের গভীর তাৎপর্য উপলব্ধি করে অন্তর্বর্তী সরকার সর্বস্তরের জনগণকে শান্ত, সংযত ও দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান জানাচ্ছে।

এই রায়ের আগেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের দিকে এক্সকাভেটর নিয়ে রওনা হয়েছিল একদল ব্যক্তি। ১০ মাস আগে জ্বালিয়ে দেওয়া ওই ভবনে তারা ঢুকতে গেলে তাদের বাধা দেন পুলিশ, সেনাসদস্যরা। একপর্যায়ে লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।

সরকারের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রায়-পরবর্তী সময়ে কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খলা, উত্তেজনাপ্রসূত আচরণ, সহিংসতা বা আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে বিশেষ অনুরোধ জানানো হচ্ছে। জনগণের, বিশেষ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্বজনদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই রায়কে ঘিরে জনমনে স্বাভাবিকভাবেই আবেগ সৃষ্টি হতে পারে। তবে সেই আবেগের বশবর্তী হয়ে যেন কেউ জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে, এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয়, সরকার এ বিষয়ে দৃঢ়ভাবে সবাইকে সতর্ক করছে।

‘যেকোনো ধরনের অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা বা জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে,’ এমন হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয় বিবৃতিতে।

এক্সকাভেটর নিয়ে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে একদল। আজ সোমবার দুপুরে

এদিকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে হস্তান্তরের জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়। তাতে বলা হয়, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের দ্বিতীয় কোনো দেশ আশ্রয় দিলে তা হবে অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল। আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন অনতিবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে।’

দুই দেশের মধ্যে থাকা প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে দুজনকে হস্তান্তর করাটা ‘ভারতের জন্য অবশ্যপালনীয় দায়িত্বও বটে’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে।

অন্তর্বর্তী সরকার এর আগেও শেখ হাসিনাকে হস্তান্তর করার জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে তাতে নয়াদিল্লি সাড়া দেয়নি। এর মধ্যে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। দলীয় নানা কর্মসূচিতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রচারও চালাচ্ছেন তিনি।

মামলার ৩৯৭ দিনের মাথায় রায়

পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়। একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন—শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল-মামুন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়। এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই আল-মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।

গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। বিচারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।

সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।