হাসনাত কাইয়ূম
হাসনাত কাইয়ূম

অভিমত: হাসনাত কাইয়ূম

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে সরকারকে দায় নিতে হবে

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সাত দিনের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা চেয়েছিল। আজ সোমবার সে সময়সীমা শেষ হচ্ছে। কিন্তু কোনো ঐকমত্য হয়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূমের অভিমত।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও গণভোটের সময় প্রশ্নে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থানের ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটা রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এমন কার্যক্রম প্রমাণ করে যাঁরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি এই দলগুলোর কোনো শ্রদ্ধা নেই। এমনকি ঐকমত্য কমিশন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বেলায়ও এটাই সত্য।

রাজনৈতিক দলগুলো এখন দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতিগত মতপার্থক্যকে সামনে এনে এবং নিজেদের পছন্দমতো পদ্ধতিকে সবার ওপর চাপিয়ে দিয়ে এরা প্রমাণ করতে চাইছে, তারাই প্রভাবশালী দল। এই প্রভাব বিস্তারকারী শক্তি প্রদর্শন করে নির্বাচনের আগেই তারা বিজয়ী দল হিসেবে ভোটের মাঠের দখল নিতে চায়।

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, গণভোট, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বৈত ক্ষমতা তথা সংসদ সদস্যের ক্ষমতা এবং কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার (গাঠনিক ক্ষমতা) নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো মতভেদ ছিল না। মতভিন্নতা ছিল জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে। অধিকাংশ দল চেয়েছে উচ্চকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) প্রশ্নে বিএনপি তাদের অবস্থান থেকে যেন সরে আসে, অর্থাৎ উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি যেন মেনে নেয়। কিন্তু এখানে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দিয়েছে। নোট অব ডিসেন্টের বিষয়ে সমাধান করতে পরে ঐকমত্য কমিশন চতুরতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। সরকারও এ ক্ষেত্রে সমাধানের পথে না গিয়ে দায়িত্বহীন আচরণ করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে তার বৈশিষ্ট্য এবং দায়িত্ব মনে রাখতে হবে। কতগুলো দায়িত্ব দিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। তারা কোনো রাজনৈতিক দল হিসেবে ক্ষমতা অর্জন করেনি। সব দলের সমর্থনে তারা কিছু নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের কাজ করছে। তারা কোনো দলের পক্ষ বা কোনো দলের প্রতিপক্ষ হতে পারবে না। সরকারকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে, দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

এখন সরকার বলছে, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা বসে যেন ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দেয়। সরকারের উচিত ইনফরমালি হলেও বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বসা, আলোচনা করা। সরকার যদি নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে, তাহলে একটা সমাধান আসবে।

আর যদি সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে কোনো সমাধানে না আসতে পারে কিংবা এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে না পারে, তাহলে তা জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, উদ্ভূত জটিল পরিস্থিতির কারণে আগামী নির্বাচন যদি ফেব্রুয়ারিতে না হয়, তাহলে এর দায়দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলো নেবে না, এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।

হাসনাত কাইয়ূম: সভাপতি, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।