
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ছিল গণ অধিকার পরিষদ। গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। তিনি নির্বাচন, সংস্কার ও সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। তাঁদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসিফ হাওলাদার
বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির প্রতিনিধিদল সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা নেওয়া ও দল-ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ চেয়েছে। জামায়াত বলেছে, প্রশাসন ও পুলিশের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ লোকই বিএনপির। আর উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বাদ দিতে বিভিন্ন দল বা গোষ্ঠীর অনুসারী উপদেষ্টাদের সবারই অপসারণ চেয়েছে এনসিপি। এ বিষয়গুলো আপনারা কীভাবে দেখেন?
নুরুল হক: গত এক বছরে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি ভাগ-বাঁটোয়ারা করে সরকারের সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, আমলাতন্ত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় তাদের লোক বসিয়েছে। এখন শেষ দিকে এসে সবাই সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে যে সরকারের উপদেষ্টারা কোন কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করছেন। আমরা তো অনেক দিন ধরেই বলে আসছিলাম যে এই সরকার একটা পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা নিয়েছে এবং কার্যত তিনটা দলকে সুবিধা দিয়ে একটা ভাগ-বাঁটোয়ারার নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। সেটা এখন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিও বলছে।
পিআর বা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে জামায়াতের আন্দোলনকে ‘রাজনৈতিক প্রতারণা’ বলেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। পরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এনসিপিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘জন্ম নিয়েই বাপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ো না।’ এর আগে তো বিভিন্ন ক্ষেত্রে এনসিপির সঙ্গে জামায়াতের অনেক বিষয়ে অবস্থানগত মিল দেখা গেছে। হঠাৎ সম্পর্ক কেন এই পর্যায়ে পৌঁছাল বলে মনে করেন?
নুরুল হক: জামায়াত এবং এনসিপির মধ্যে একটা দহরম-মহরম সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এনসিপির নেতারা গত এক বছরে যেভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, সামনে তাঁদের অনেককে এসবের জন্য জবাবদিহি ও বিচারের মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে। তাই তাঁরা এখন ক্ষমতার অংশ হতে চাইছেন। জামায়াতের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা কম; এ মুহূর্তে সেই সম্ভাবনা বিএনপির। এত দিন জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে এনসিপির প্রতি বিএনপির আস্থার সংকট আছে। তাই জামায়াতের বিরুদ্ধে কিছু কথা বলে তাঁরা বিএনপির আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখন যে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে, একে ঘিরে নতুন কোনো সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখেন?
নুরুল হক: সরকার এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্তেই পৌঁছাক, সেখানে একটা রাজনৈতিক ঐক্য প্রয়োজন হবে। জামায়াত বা অন্যান্য দল যদি জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজনের দাবিতে খুব শক্ত অবস্থানে থাকে, তাহলে এটা নিয়ে সংকটের আশঙ্কা আছে।
প্রশাসন এবং উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করা না হলে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সংঘাতপূর্ণ নির্বাচন হবে।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন কতটা সম্ভব বলে মনে করেন?
নুরুল হক: আমি মনে করি, এই উপদেষ্টা পরিষদ দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। প্রশাসন এবং উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করা না হলে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সংঘাতপূর্ণ নির্বাচন হবে।
আপনার নির্বাচনী এলাকায় সহযোগিতা করতে তো বিএনপি তার স্থানীয় নেতা-কর্মীদের চিঠি দিয়েছিল...
নুরুল হক: হ্যাঁ। কিন্তু এটার পরে বিএনপির সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আমাদের সেভাবে বিস্তারিত কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি আমাদের কাছে প্রার্থীদের একটা তালিকা চেয়েছে। বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনে গেলে সেখানে অবশ্যই সরকার পরিচালনায় আমাদের ভূমিকা কী হবে, তা জানতে হবে। আমাদের দলের অবস্থান ও নেতা-কর্মীদের ত্যাগ অনুযায়ী একটা সম্মানজনক আসন সমঝোতা না হলে বিএনপির সঙ্গে আমাদের জোট না-ও হতে পারে।
এনসিপির সঙ্গে আপনাদের দল একীভূত হওয়ার একটা আলোচনা শোনা যাচ্ছিল। এ বিষয়টা এখন কোন পর্যায়ে আছে?
নুরুল হক: এনসিপির যে ধরনের অপকর্ম আছে, তাদের নেতারা গত এক বছরে যা করেছেন, গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। এনসিপির অপকর্মের দায়ভার নিয়ে তাদের সঙ্গে একত্র হওয়ার মতো জায়গায় নেই। আলাপ-আলোচনা হয়েছিল, সেটা এগোয়নি। আর সামগ্রিক পটভূমি বিবেচনায় আমাদের নেতারা এখন আর এটাতে একমত নন।
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে যখন একটা সংকট তৈরি হলো, তখন গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দলের সঙ্গে আপনাদের দল, এনসিপি ও এবি পার্টিকে মাঝামাঝি সমাধানের পথ খুঁজতে একটা আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই ৯ দলের একটি নির্বাচনী ঐক্য হতে পারে বলেও আলোচনা শোনা গিয়েছিল। এটা এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে?
নুরুল হক: এ মুহূর্তে ৯ দলের কোনো জোট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এনসিপি যেখানে বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছে, সে ক্ষেত্রে এখন বিকল্প জোটের আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
আপনাকে ধন্যবাদ।
নুরুল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ।