ঢাকা ৯ আসনের প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর গত ২৫ ডিসেম্বর এই ছবি ফেসবুকে দেন তাসনিম জারা
ঢাকা ৯ আসনের প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর গত ২৫ ডিসেম্বর এই ছবি ফেসবুকে দেন তাসনিম জারা

এনসিপি থেকে নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন তাসনিম জারা

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) মতভেদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিলেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।

আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৯ আসনে এনসিপি তাঁকে প্রার্থী মনোনীত করেছিল। তবে আজ শনিবার তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি কোনো দলের হয়ে নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

আজ সন্ধ্যা সাতটার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ কথা জানান তাসনিম জারা। সেখানে তিনি এনসিপির বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। তবে এনসিপি সূত্র জানিয়েছে, তাসনিম জারা ইতিমধ্যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

চিকিৎসক তাসনিম জারা এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে এনসিপি গড়ার শুরু থেকে দলটিতে যুক্ত ছিলেন। দলটি গড়ে তোলেন অভ্যুত্থানের তরুণ নেতারা। দলে দায়িত্ব নেওয়ার পর নানা কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন তাসনিম জারা।

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে শাপলা কলি প্রতীকে অংশ নিতে এনসিপি ইতিমধ্যে ১২২ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সেখানে তাসনিম জারাকে ঢাকা–৯ (খিলগাঁও, সবুজবাগ, মুগদা) আসনে মনোনীত করা হয়। নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির আসন সমঝোতার আলোচনার খবর সম্প্রতি চাউর হওয়ার পর অভ্যুত্থানকারী অনেকের মধ্যে ক্ষোভ–বিক্ষোভ দেখা দেয়। দলটির ৩০ নেতা আপত্তি তুলে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে চিঠিও দেন।

তার মধ্যেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে তাসনিম জারা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল একটি রাজনৈতিক দলের প্ল্যাটফর্ম থেকে সংসদে গিয়ে আমার এলাকার মানুষের ও দেশের সেবা করা। তবে বাস্তবিক প্রেক্ষাপটের কারণে আমি কোনো নির্দিষ্ট দল বা জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আপনাদের ও দেশের মানুষকে ওয়াদা করেছিলাম যে আপনাদের জন্য এবং নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ার জন্য আমি লড়ব। পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আমি আমার সেই ওয়াদা রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাই এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-৯ থেকে অংশগ্রহণ করব।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে শনিবার এই পোস্ট দেন তাসনিম জারা।

কী কারণে এই সিদ্ধান্ত, তার ব্যাখ্যায় এনসিপির কোনো প্রসঙ্গ টানেননি তাসনিম জারা। তিনি লিখেছেন, ‘একটা দলের প্রার্থী হলে সেই দলের স্থানীয় অফিস থাকে, সুসংগঠিত কর্মিবাহিনী থাকে। সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে নিরাপত্তা বা অন্যান্য বিষয়ে আপত্তি ও শঙ্কা নিয়ে কথা বলার সুযোগ থাকে। তবে আমি যেহেতু কোনো দলের সঙ্গে থাকছি না, তাই আমার সেসব কিছুই থাকবে না। আমার একমাত্র ভরসা আপনারা। আপনাদের মেয়ে হিসেবে আমার সততা, নিষ্ঠা এবং নতুন রাজনীতি করার অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রেক্ষিতে আপনারা যদি স্নেহ ও সমর্থন দেন, তবেই আমি আপনাদের সেবা করার সুযোগ পাব।’

তাসনিম জারার এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে এনসিপির কোনো প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর পোস্টে লাইক দিয়েছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

পোস্টের শেষে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ‘দুটি বিশেষ বিষয়’–এর কথা বলেছেন তাসনিম জারা। প্রথম বিষয় হিসেবে তিনি লিখেছেন, ‘নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতে আইনি বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ঢাকা-৯ আসনের ৪ হাজার ৬৯৩ জন ভোটারের সমর্থনযুক্ত স্বাক্ষর একটি নির্দিষ্ট ফর্মে প্রয়োজন। আগামীকাল (রোববার) এই স্বাক্ষর সংগ্রহের কাজ শুরু করব।’

এক দিনে এত মানুষের স্বাক্ষর গোছানো প্রায় অসম্ভব একটি কাজ উল্লেখ করে নির্বচনী এলাকার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাহায্য চেয়েছেন তাসনিম জারা। এই কাজে যাঁরা আগামীকাল বসার জায়গা দিয়ে বা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সাহায্য করতে চান, তাঁদের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

নির্বাচনের খরচ জোগাতে এরই মধ্যে ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে ৪৭ লাখ টাকা তুলেছেন তাসনিম জারা। দ্বিতীয় বিষয় হিসেবে তা নিয়ে তিনি লিখেছেন, তাঁর স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কারণে যাঁরা অর্থ ফেরত পেতে চান, তাঁদের অর্থ ফেরত দেবেন। যাঁরা বিকাশের মাধ্যমে তাঁকে টাকা পাঠিয়েছিলেন, তাঁদের অর্থ ফেরত পেতে অনলাইনে ফর্ম পূরণের লিংকও পোস্টে দিয়েছেন তিনি।

যাঁরা ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠিয়েছিলেন, তাঁদের শিগগিরই অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তাসনিম জারা।

ঢাকা–৯–এর নির্বাচনী এলাকাবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এই পোস্ট তাসনিম জারা শেষ করেছেন এভাবে,  ‘আপনাদেরই মেয়ে, তাসনিম জারা।’

সিলেটে এনসিপি আয়োজিত এক উঠান বৈঠকে তাসনিম জারা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করা তাসনিম জারা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে (এনএইচএস) জুনিয়র চিকিৎসক হিসেবে কাজও করেন তিনি।

কোভিড মহামারির সময় ভুল তথ্য আর গুজবগুলো চিহ্নিত করে স্বাস্থ্যবিষয়ক ভিডিও বানিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে দিয়ে বাংলাদেশে পরিচিত হয়ে ওঠেন তাসনিম জারা। রবি টেন মিনিটস স্কুলেও তাঁর ভিডিও প্রচারিত হয়।