জ্ঞান ও বিনয়: ইমান দৃঢ় করার দুই উপাদান

মহান আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালোবাসার পাশাপাশি বিনয় বা লজ্জা ইমানের একটি অপরিহার্য অংশ। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘লজ্জা ইমানের অংশ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩৫)

এই লজ্জা কেবল মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের স্বাভাবিক লজ্জাশীলতা নয়, বরং মহান আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিনয় প্রকাশের বিষয়। যদি মহান আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কে লজ্জার ঘাটতি হয়, তবে অন্য সম্পর্কেও তা প্রভাব ফেলে এবং মানুষ সৌন্দর্য ও নৈতিক শৃঙ্খলা হারায়।

যদি মহান আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কে লজ্জার ঘাটতি হয়, তবে অন্য সম্পর্কেও তা প্রভাব ফেলে এবং মানুষ সৌন্দর্য ও নৈতিক শৃঙ্খলা হারায়।

প্রকৃত লজ্জা কী

মহানবী (সা.) হজরত ইবনে মাসউদ (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘মহান আল্লাহর সামনে প্রকৃত লজ্জা প্রদর্শন করো।’ সাহাবিরা বলেন, ‘আমরা তো লজ্জাশীল।’ তখন তিনি ব্যাখ্যা করলেন, প্রকৃত লজ্জার অর্থ হলো—

  • মন ও চিন্তাকে সঠিক রাখা।

  • পেটকে হারাম খাদ্য থেকে বিরত রাখা।

  • মৃত্যু ও কবরের কথা সর্বদা স্মরণ রাখা।

  • আখিরাতের আশায় দুনিয়ার ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকা।

এই সকল গুণই মানুষকে মহান আল্লাহর সামনে সত্যিকারের বিনয়ী করে তোলে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৪৫৮)

জ্ঞান ও বিনয়ের ভিত্তি

লজ্জার মূল উপাদান হলো মহান আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান। যিনি জানেন যে মহান আল্লাহ সবকিছু দেখেন, শোনেন এবং অন্তরের গোপন কথাও জানেন (সুরা গাফির, আয়াত: ১৯), তার পক্ষে গোপনে কোনো অন্যায় করা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনজন ফিসফিস করলে তিনি চতুর্থ, পাঁচজন হলে তিনি ষষ্ঠ। তারা যেখানেই থাকুক না কেন, মহান আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা মুজাদালাহ, আয়াত: ৭)

যে ব্যক্তি এই আয়াতে বিশ্বাস করে, সে কখনো নির্জনে এমন কাজ করবে না, যা মহান আল্লাহর সামনে লজ্জাজনক।

পৃথিবীতে দম্ভভরে হাঁটবে না। তুমি কখনো জমিন বিদীর্ণ করতে পারবে না আর পাহাড়ের সমান উচ্চতাও অর্জন করতে পারবে না।
সুরা ইসরা, আয়াত: ৩৭

মানুষ মহান আল্লাহর মহিমার সামনে অত্যন্ত ক্ষুদ্র। পাহাড়, সাগর কিংবা মহাবিশ্বের তুলনায় মানুষের অস্তিত্ব তুচ্ছ। তবু যারা অহংকার করে পৃথিবীতে দম্ভভরে চলে, তাদের মহান আল্লাহ সতর্ক করেছেন, ‘পৃথিবীতে দম্ভভরে হাঁটবে না। তুমি কখনো জমিন বিদীর্ণ করতে পারবে না আর পাহাড়ের সমান উচ্চতাও অর্জন করতে পারবে না।’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ৩৭)

অতএব, মানুষের প্রকৃত মর্যাদা নিহিত আছে বিনয় ও মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায়। আমাদের প্রতিটি যোগ্যতা, সম্পদ, শক্তি ও সামর্থ্য মহান আল্লাহর দান। এগুলো তাঁর অবাধ্যতায় ব্যবহার করা গুরুতর অপরাধ।

ত্যাগ ও কৃতজ্ঞতা

আমরা প্রায়ই মনে করি, ইসলাম ও মহান আল্লাহর পথে আমরা অনেক ত্যাগ করছি। অথচ সত্য হলো, আমাদের দান-সদকা বা কোরবানির সামর্থ্যও মহান আল্লাহ প্রদত্ত। কোরআনে বলা হয়েছে, ইসলামের পথে আসা মানুষের পক্ষ থেকে মহান আল্লাহর প্রতি কোনো উপকার নয়, বরং তারা নিজেরাই সৌভাগ্যবান যে মহান আল্লাহ তাদের ইসলাম গ্রহণের হেদায়েত দিয়েছেন। (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১৭)

যিনি জানেন যে মহান আল্লাহ সবকিছু দেখেন, শোনেন এবং অন্তরের গোপন কথাও জানেন, তার পক্ষে গোপনে কোনো অন্যায় করা সম্ভব নয়।

তওবা ও বিনয়

মহান আল্লাহর দরবারে তওবার দরজা সব সময় খোলা। মানুষ যতই গুনাহ করুক, আন্তরিকভাবে ফিরে এলে তওবা কবুল হয়। বিনয়, তওবা এবং নিজের অক্ষমতা স্বীকার করা ইবাদতের মূল অনুষঙ্গ। বিনয় ও লজ্জা কেবল সামাজিক শিষ্টাচার নয়, বরং ইমানের প্রাণ। প্রকৃত বিনয় মানুষকে পাপ থেকে রক্ষা করে, মহান আল্লাহর উপস্থিতি স্মরণ করায়, অহংকার থেকে দূরে রাখে এবং কৃতজ্ঞতায় উদ্বুদ্ধ করে। তাই বিনয়ী মানুষই মহান আল্লাহর কাছে সত্যিকারের মর্যাদা লাভ করে।

সূত্র: আমীন আহসান ইসলাহীর তাজকিয়া: দ্য ইসলামিক পাথ অব সেলফ-ডেভেলপমেন্ট গ্রন্থ থেকে সংক্ষেপিত, দ্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে।

 mardia91@gmail.com

মারদিয়া মমতাজ: শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী