ক্রিকেট মাঠে অনেক রকম নাটক দেখা গেছে। কিন্তু ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড পার্থ টেস্টের সেই সকালটা ছিল একেবারের ভিন্নতর। কাঠ নয়, অ্যালুমিনিয়ামের ব্যাট হাতে খেলতে নামেন ডেনিস লিলি।
আগের দিন ৮ উইকেটে ২৩২ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। পরদিন লিলি যখন ব্যাট হাতে নামলেন, তাঁর হাতে ঝকঝকে ধাতব ব্যাট। নাম—কমব্যাট। এটা মূলত লিলির বন্ধু গ্রাহাম মোনাহানের কোম্পানির ব্যাট। সস্তা দামে স্কুল ও বিনোদনমূলক ক্রিকেটে বিক্রির উদ্দেশ্যে বানানো। পরে জানা যায়, লিলিও ছিলেন অংশীদার। যা-ই হোক, অপেশাদারদের জন্য তৈরি করা সেই অ্যালুমিনিয়ামের ব্যাট নিয়ে টেস্ট খেলতে নেমে যান লিলি।
ইয়ান বোথামের বল লিলির ব্যাটে লাগতেই ‘টং’ করে শব্দ ওঠে। ইংলিশ অধিনায়ক মাইক ব্রিয়ারলি সঙ্গে সঙ্গে আম্পায়ারের কাছে অভিযোগ দেন, বলের ক্ষতি হচ্ছে। আম্পায়ার লিলিকে ডাকলে তিনি বলেন, ক্রিকেট আইনের কোথাও তো লেখা নেই যে ব্যাট কাঠের হতে হবে।
এদিকে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক গ্রেগ চ্যাপেল তখন ড্রেসিংরুমে বসে এসব নাটক দেখে যাচ্ছিলেন। সকালেই লিলিকে এই ব্যাটটা দিয়ে অনুশীলন করতে দেখেছিলেন। তখনই জেনেছিলেন, লিলি এটা নিয়ে মাঠে নামবে কোম্পানির প্রচারণার জন্য।
কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে চ্যাপেলও বিরক্ত হয়ে ওঠেন। লিলির ব্যাটে বল ঠিকমতো লাগছিল না। মারে জোর হচ্ছিল না। বিরক্ত চ্যাপেল দ্বাদশ খেলোয়াড় রডনি হগকে একটি কাঠের ব্যাট দিয়ে মাঠে পাঠালেন। বললেন, লিলির হাত থেকে অ্যালুমিনিয়ামের ওটা নিয়ে এসো।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর হগ কাঠের ব্যাট নিয়ে ফিরে আসেন। লিলি অ্যালুমিনিয়ামের ব্যাট ছাড়তে রাজি নন। একপর্যায়ে চ্যাপেলকেই ড্রেসিংরুম ছেড়ে মাঠে ঢুকতে হয়। অধিনায়ককে আর ফিরিয়ে দিতে পারেননি লিলি, কাঠের ব্যাটটা হাতে নেন। তবে হাতের ধাতব ব্যাটটা ছুড়ে মারেন। চ্যাপেলের মাথার ওপর দিয়ে ব্যাট পড়ে কয়েক গজ দূরে।
কাঠের ব্যাটে অবশ্য লিলি বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। বোথামের বলে আউট হয়ে যান ৩৯ বলে ১৮ রান করে। এর কিছুদিন পরই ক্রিকেট আইনে পরিবর্তন আসে—ব্যাট অবশ্যই কাঠের হতে হবে।
সেই অ্যালুমিনিয়াম ব্যাটে দুই দলের খেলোয়াড়দের অটোগ্রাফ নিয়ে স্মারক হিসেবে রেখে দিয়েছেন লিলি। ব্যাটের মধ্যে ইংল্যান্ড অধিনায়ক ব্রিয়ারলি লিখে দিয়েছিলেন, ‘গুড লাক উইথ দ্য সেলস (ভালো বিক্রির জন্য শুভকামনা)।’