
টি–টোয়েন্টিতে ক্রমেই উন্নতি করছে বাংলাদেশ, খেলার ধরনেও আসছে পরিবর্তন।
‘আপনি তো এবার একবারও সংবাদ সম্মেলনে এলেন না…।’
কথাটা শোনার পর ফিল সিমন্সের গম্ভীর মুখে হাসি ফুটল মুহূর্তেই। উত্তরে বললেন, ‘আমি সব সময় ক্যামেরার পেছনে থাকাটাই পছন্দ করি, সামনে থাকবে খেলোয়াড়েরা।’ আবুধাবির পার্ক রোটানা হোটেলে যখন এই কথোপকথন, তখন বাংলাদেশের সুপার ফোরে খেলা নিশ্চিত হয়নি। আর এখন বাংলাদেশকে হাতছানি দিচ্ছে এশিয়া কাপের ফাইনাল। এর আগেও তিনবার এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। লিটন দাসদের জন্য নতুন আসলে টি–টোয়েন্টিতে ধারাবাহিক উন্নতি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০২১ সালের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে পাঁচ ম্যাচ খেলে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। অন্য দলগুলো যখন এ সংস্করণে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের পথে হেঁটেছে, বাংলাদেশ ছুটেছে উল্টো দিকে। খেলার ধরনে দেখা মেলেনি টি–টোয়েন্টির ছাপ। কিন্তু দুই বছর ধরে আবার টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের খেলায় উন্নতির ছাপ। সর্বশেষ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুযোগ ছিল সেমিফাইনাল খেলারও।
গত বছরের সাফল্যও এবার ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রান্তে বাংলাদেশ। এ বছর এখন পর্যন্ত খেলা ১৯ ম্যাচে ১০ জয়। এক পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ১২টি জয় ছিল গত বছর। এশিয়া কাপের ফাইনালে পৌঁছাতে পারলে সেটি ছুঁয়েও ফেলতে পারে। এরপর আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ। গত বছর অক্টোবরে বাংলাদেশের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন ফিল সিমন্স। তাঁর অধীন প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে তাদের টি–টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই করে বাংলাদেশ। সিমন্সের অধীন ২২ টি–টোয়েন্টিতে ১৩টি জয়।
শুধু ম্যাচের ফলে নয়, বদল এসেছে বাংলাদেশের খেলার ধরনেও। বাংলাদেশের টি–টোয়েন্টির ইতিহাসে এক পঞ্জিকাবর্ষে ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে বেশি ছক্কা মারার রেকর্ডও সেটাই বলছে। অন্তত পাঁচটি টি–টোয়েন্টি খেলেছেন, এমন পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ওভারপ্রতি রান নেওয়ার গড়ও এবার সর্বোচ্চ। এ বছর এখন পর্যন্ত ওভারপ্রতি রান ৮.২৬। তা কীসের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ?
অধিনায়ক লিটনের ভূমিকা, দল কিংবা একাদশ নির্বাচনে সাহসী হওয়া আর কোচদের স্বাধীনতা—মূলত এ তিন কারণেই টি–টোয়েন্টিতে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ; দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের ধারণা এমনটাই। ভারতের বিপক্ষে আজকের ম্যাচের আগে সিমন্স বলেছেন, ‘অধিনায়ক যেভাবে বাকিদের পথ দেখায় আর বলে কীভাবে সে তাদের চায়; এটার ভূমিকা আছে। কোচদেরও নিজেদের প্রকাশ করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।’
এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দল এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেখানে সমালোচনার ঝুঁকি ছিল। প্রায় আড়াই বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেলা সাইফ হাসান ও নুরুল হাসানকে এশিয়া কাপের স্কোয়াডে নেওয়া হয়। ম্যাচের একাদশ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি নিয়েছেন কোচ–অধিনায়ক। এসব রদবদল যে সব সময় সাফল্য এনে দিয়েছে, তা নয়। কিন্তু সিমন্সের কথা, ‘টি–টোয়েন্টিতে আমি কিছুকে ঝুঁকি মনে করি না। যখন থেকে দায়িত্বটা নিয়েছি, নিশ্চিত করতে চেয়েছি দল এভাবে খেলবে। সেটা খেলার জন্য যে ধরনের খেলোয়াড় আমাদের দরকার, আমরা তাদেরকেই নিয়েছি।’