বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।

বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলোর আরও বেশি টাকা পাওয়া উচিত—মনে করেন ভন

ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) থেকে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলগুলোর আরও বেশি টাকা পাওয়া উচিত বলে মনে করেন সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন। তাঁর মতে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বার্থে সব দলেরই লভ্যাংশ প্রাপ্তি কাছাকাছি থাকা দরকার।

‘স্টিক টু ক্রিকেট’ নামের একটি পডকাস্টে এসব কথা বলেছেন ভন। তাঁর কথায় সম্মতি জানান বৈঠকে উপস্থিত সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ব্রায়ান লারাও।

২০২৩ সালের জুলাইয়ে আইসিসি বোর্ড সভায় ২০২৪-২৭ চক্রের লভ্যাংশ ভাগাভাগির যে মডেল অনুমোদন করা হয়, তাতে সবচেয়ে বেশি ৩৮.৫০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআইয়ের নামে।

ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬.৮৯ ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬.২৫ শতাংশ এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) চতুর্থ সর্বোচ্চ ৫.৭৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ পাচ্ছে। অন্য সব দেশের লভ্যাংশ ৫ শতাংশের কম।

আইসিসি থেকে ভারতের বেশি প্রাপ্তি বা অন্যদের কম প্রাপ্তি নিয়ে প্রায়ই আলোচনা ওঠে। ‘স্টিক টু ক্রিকেট’ পডকাস্টের সর্বশেষ পর্বে সমসাময়িক ক্রিকেট নিয়ে আলোচনাও একই প্রসঙ্গ।

বৈঠকে ছিলেন ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার ভন, অ্যালিস্টার কুক, ডেভিড লয়েড ও ফিল টাফনেল এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ক্রিকেটার লারা।

উপস্থিত সবার কাছে ভন প্রশ্ন রাখেন, আধুনিক ক্রিকেটের সবচেয়ে বিরক্তিকর দিক কোনটি? সাবেক ইংলিশ ওপেনার কুক জবাব দেন,‘দেশের হয়ে খেলাটা এখন বড় করে দেখা হয় না।’

এ কথায় সম্মতি দেন ভন, লারা ও টাফনেল। লারা বলেন, ‘এই ব্যাপারটা ফিরিয়ে আনতে উপায় খোঁজা দরকার।’ কুক তখন বলেন, ‘আমি খেলোয়াড়দের দোষ দিচ্ছি না। তবে তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধরে রাখার মাধ্যম দরকার।’ এ সময় ডেভিড লয়েড ‘মানি’ শব্দ উচারণ করলে কুক তা সমর্থন করেন।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ফ্র্যাঞ্চাজি টি-টোয়েন্টি লিগ চালুর পর অনেক ক্রিকেটারই এখন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে খুব বেশি উৎসাহিত হন না। কেউ কেউ আবার এসব লিগে খেলার জন্য আগেভাগে জাতীয় দল থেকে অবসর নিচ্ছেন বা বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি থেকে সরে যাচ্ছেন। সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরান আর দক্ষিণ আফ্রিকার হাইনরিখ ক্লাসেনই যার বড় উদাহরণ।

ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন।

কুকের কথায় বিষয়টি উঠে আসার পর ক্রিকেট বোর্ডগুলো যে খেলোয়াড়দের দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত টাকা পায় না, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ভন। ৫০ বছর বয়সী এই সাবেক ক্রিকেটার মনে করেন, বোর্ডগুলোর মধ্যে সমানভাবে অর্থ বণ্টন হওয়া দরকার, ‘যে জিনিসটা আমার বাজে লাগে, সেটা হচ্ছে ক্রিকেটের টাকাপয়সা সঠিকভাবে ভাগ হয় না। আইসিসির অনেক টাকা আছে। আমরা যদি ক্রিকেটে দুই স্তরও চালু করি, সবচেয়ে ন্যায্য হচ্ছে ভাগাভাগিটা ঠিক করা। আমি বলছি না যে সবাই একদম সমানে সমান টাকা পাক। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের মতো দলগুলোর ভাগের টাকা আরও বেশি পাওয়া উচিত, যাতে তারা খেলোয়াড়দের আরও বেশি টাকা দিতে পারে। একটা ভালো অঙ্কের অর্থ পেলে এই খেলোয়াড়েরা জাতীয় দলের হয়ে আরও বেশি দিন খেলবেন।’

ভনের কথায় সমর্থন জানিয়ে মাথা নাড়ান লারা। আর লয়েড বলেন, ‘আমি একমত।’

বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ড কত পায়

আইসিসি কোন দেশকে কত টাকা বা কত শতাংশ লভ্যাংশ দেয়, সেটি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তবে ২০২৩ সালে ক্রিকেটপোর্টাল ইএসপিএন ক্রিকইনফোর এক প্রতিবেদন অনুসারে অনুমোদিত লভ্যাংশ মডেল বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়।

ক্রিকইনফোর তথ্য অনুসারে, ২০২৪-২৭ চক্রে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড পাচ্ছে আইসিসির লভ্যাংশের  ৪.৪৬ শতাংশ। ৬০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রাক্কলিত আয় হিসাবে বাংলাদেশ বছরে ২ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের বেশি পাওয়ার কথা।

অন্যদের মধ্যে শ্রীলঙ্কা ৪.৫২ শতাংশ বা ২.৭১ কোটি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪.৫৮ বা ২.৭৫ কোটি, নিউজিল্যান্ড ৪.৭৩ শতাংশ বা ২.৮৩ কোটি এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ৪.৩৭ শতাংশ বা ২.৬৪ কোটি মার্কিন ডলার পাবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছিল, যা চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় এই পাঁচ দেশের জন্য প্রায় ১০ লাখ মার্কিন ডলার করে বাড়ানো হয়েছিল বলে জানিয়েছিল ক্রিকইনফো।