কলকাতার গ্রাফিকসে মোস্তাফিজ
কলকাতার গ্রাফিকসে মোস্তাফিজ

দাম তো ৯ কোটির বেশি, নিয়মিত একাদশে জায়গা মিলবে কি মোস্তাফিজের

৯ কোটি ২০ লাখ রুপি—আইপিএল নিলামের টেবিলে এবার বড় দানই মেরেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। অনেকেরই কৌতূহল, যে মোস্তাফিজকে আগে কেউ তিন কোটি রুপিতেও কেনেনি, এবার কলকাতা নাইট রাইডার্স তাঁর জন্য তিন গুণের বেশি অর্থ কেন খরচ করেছে?

এককথায় উত্তর হতে পারে—নিশ্চয়ই বিশেষ পরিকল্পনা আছে। মোস্তাফিজকে পেয়ে কলকাতা কোচ অভিষেক নায়ারের মুখের হাসিই ইঙ্গিত দিচ্ছিল, মোস্তাফিজকে তাঁদের কত প্রয়োজন! তবে কি বাংলাদেশের দর্শক আশা করতে পারেন, এবারের আইপিএলে নিয়মিতই খেলবেন মোস্তাফিজ? এই উত্তরটা এককথায় দেওয়া মুশকিল।

দলে ভালো ক্রিকেটার না থাকা যেমন সমস্যা, তেমনি অনেক ভালো ক্রিকেটার থাকাও সমস্যা। এবার দুবাইয়ের মিনি নিলাম থেকে একের পর এক ক্রিকেটার কিনে কলকাতা তারকাবহুল দলই গড়েছে। আর এই দলের একাদশে সুযোগ পেতে মোস্তাফিজকে লড়াই–ই করতে হবে। কারণ, এক ম্যাচে বিদেশি খেলতে পারেন চারজনই।

প্রথমে দেখে নেওয়া যাক, কলকাতায় বিদেশি ক্রিকেটার কারা। দলটি ওপেনার হিসেবে নিয়েছে ফিন অ্যালেন, টিম সাইফার্ট, রাচিন রবীন্দ্রকে। নিউজিল্যান্ডের এই তিন ক্রিকেটারই অনেকটা একই ধরনের খেলোয়াড়। তিনজনই উইকেটে এসে দ্রুত রান তুলতে পারেন। তবে রবীন্দ্রকে একাদশে নিলে তাঁর কাছ থেকে বাঁহাতি স্পিনে দু–একটা ওভারও পাওয়ার সুযোগ আছে দলের।

নাইট রাইডার্স অস্ট্রেলিয়ার ক্যামেরন গ্রিনকে কিনেছে ২৫ কোটি ২০ লাখ রুপিতে। এবারের নিলামে এটি সর্বোচ্চ দাম। এ ছাড়া ফিনিশার হিসেবে আগে থেকেই আছেন রোভম্যান পাওয়েল, তাঁকে গত মৌসুম থেকে রিটেইন করা হয়েছিল।

মোস্তাফিজের পাশাপাশি দলটি নিলাম থেকে শ্রীলঙ্কার পেসার মাতিশা পাতিরানাকেও দলে নিয়েছে। তাঁকে কিনতে কলকাতার খরচ হয়েছে ১৮ কোটি রুপি। সঙ্গে সুনীল নারাইন তো আছেনই।

প্রতি ম্যাচের একাদশ গড়তে বিদেশিদের মধ্যে সবার আগে নারাইনের নামই লেখা হওয়ার কথা। ব্যাটিং-বোলিং—দুই জায়গাতেই নাইট রাইডার্সের অপরিহার্য নাম এই ক্যারিবীয়। গ্রিনও থাকারই কথা। তাঁকে কিনতে নিলামে অতি আগ্রহই যার বড় প্রমাণ।

পাতিরানাও আছেন কলকাতায়

কলকাতার একাদশে পাতিরানাকেও প্রয়োজন। কারণ, কলকাতার ভারতীয় দুই পেসার হর্ষিত রানা ও বৈভব অরোরা ডেথ বোলিংয়ের জন্য খুব একটা পরীক্ষিত নন। আন্দ্রে রাসেল আইপিএল থেকে অবসর নেওয়ায় ডেথ ওভারে তাঁর বোলিং মিস করবে কলকাতা।

পাতিরানাকে তাই ইনিংসের শেষ দিকে দরকার হবে কলকাতার। বিশেষ করে ১০ থেকে ২০ ওভারের মধ্যে তাঁকে ৪ ওভার করানো হতে পারে। নতুন বল সামলানোর দায়িত্বটা থাকবে বৈভব ও হর্ষিতের ওপর। এরপর স্পিনে নারাইন ও বরুণ চক্রবর্তী তো আছেনই।

সব মিলিয়ে যা দাঁড়াচ্ছে, তিনজন বিদেশি খেলোয়াড়ের নাম একাদশে অনেকটা নিশ্চিত—নারাইন, গ্রিন ও পাতিরানা। তিন ওপেনার অ্যালেন, সাইফার্ট, রবীন্দ্র, পাওয়েল ও মোস্তাফিজ থেকে খেলবেন একজন। রাসেল না থাকায় কলকাতা দলে পাওয়েলের গুরুত্ব বাড়ার কথা। কারণ, গ্রিন আর রাসেল ঠিক একই ধরনের ক্রিকেটার নন। গ্রিন একজন নিখাদ ব্যাটসম্যান আর রাসেল তো শেষে নেমে শুধু ঝড় তুলতেন।

আন্দ্রে রাসেল এবার ক্রিকেটার হিসেবে কলকাতা দলে নেই

এই দলে রাসেলের মতো শেষে ঝড় তোলার মতো সামর্থ্যবান হচ্ছেন পাওয়েল।
কলকাতা সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০২৪ সালে। সেবার ওপেনিংয়ে নেমে ফিল সল্ট ১৮২ স্ট্রাইক রেটে ৪৩৫ রান করেছিলেন। পুরো মৌসুমে তিনিই ছিলেন কলকাতার অন্যতম এক্স ফ্যাক্টর। সেই কৌশলেও যেতে পারে কলকাতা। সে ক্ষেত্রে অ্যালেন, সাইফার্ট ও রবীন্দ্রর কাউকে খেলাতে হতে পারে তাদের।

তাহলে মোস্তাফিজের জায়গা কোথায়?

নারাইন যদি ওপেন করেন, তাহলে মোস্তাফিজের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। সে ক্ষেত্রে বিদেশি তিন ওপেনারের কাউকেই সুযোগ দিতে হবে না কলকাতার। ওপেনিংয়ে নারাইনের সঙ্গে থাকবেন রাহুল ত্রিপাঠি।

এরপর অজিঙ্কা রাহানে, গ্রিন, অংকৃষ রঘুবংশী, রমণদীপ সিং, রিংকু সিংরা আছেন। দ্রুত শুরুর কাজ নারাইন ও ত্রিপাঠি করে দিলে আর শেষ ঝড় তোলার কাজটা যদি রমণদীপ, রিংকুরা করতে পারেন, তাহলে পাওয়েল নন, সুযোগ পাওয়ার দাবিদার মোস্তাফিজই। সে ক্ষেত্রে চার বিদেশি হবেন নারাইন, গ্রিন, পাতিরানা ও মোস্তাফিজ। বোলিং আক্রমণ হবে ভয়ানক!

আবার একাদশ গঠনে উইকেটের ভূমিকাও থাকবে ব্যাপক। ধীরগতির উইকেটে মোস্তাফিজের একাদশে থাকা অনেকটাই নিশ্চিত, যেমন চেন্নাইয়ের উইকেট। আর পাতিরানার ফিটনেস নিয়েও প্রশ্ন আছে। লাগাতার অনেক ম্যাচ হয়তো তিনি খেলতে পারবেন না। চোটপ্রবণ এই ক্রিকেটার চলতি বছরে টি-টোয়েন্টিই খেলেছেন মাত্র ২টি।

রহস্য স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী

তবে ঐতিহাসিকভাবে কলকাতার ‘মিস্টেরিয়াস’ বোলারদের প্রতি বাড়তি আকর্ষণ আছে। নারাইন, বরুণ যার বড় উদাহরণ। রহস্যময়ী বোলারদের কাছ থেকে অনেকবারই ভালো কিছু পেয়েছে কলকাতা। অবশ্য রহস্য তো মোস্তাফিজেরও আছে!
কাটারের রহস্য!

আসলে কলকাতা এবার বিভিন্ন কম্বিনেশন গড়ার মতো দল গড়েছে। এই দলের পেস-ভান্ডারে আকাশ দীপ, উমরান মালিক, কার্তিক তিয়াগির মতো পেসাররাও আছেন। এ ছাড়া অঙ্কুল রয়, মনীশ পান্ডেরাও আছেন। তাঁদের নিয়েও তৈরি হতে পারে বিকল্প কম্বিনেশন। তাই অনেক কিছুই আসলে ‘যদি কিন্তুর’ ওপর নির্ভর করছে। মোস্তাফিজের নিয়মিত একাদশে সুযোগ পাওয়াও...