বড় জয়ে সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ
বড় জয়ে সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ

টি–টোয়েন্টি

সিরিজ জয়েই শেষ হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতার বছর

ক্রেইগ ইয়ংয়ের বলটা ছক্কা মেরে গ্যালারির দোতলায় ফেললেন তানজিদ হাসান। সঙ্গে সঙ্গেই ঘুরে তাকালেন ড্রেসিংরুমের দিকে। ততক্ষণে তাঁর হাফ সেঞ্চুরি হয়ে গেছে। সতীর্থদের দিকে তাকিয়ে তাঁর উদ্‌যাপনে যেন ছিল একটা বার্তাও। ডাগআউটে বসা সবাই তখন স্বস্তিতে—যাক, শেষটা তাহলে ভালোই হলো।

প্রথম ম্যাচে হেরে সিরিজ জেতা নিয়ে যে দুশ্চিন্তা জমেছিল, তা তো কাটলই; সঙ্গে বিশ্বকাপের আগে নিজেদের শেষ ম্যাচে বড় ব্যবধানে জেতার স্বস্তিও পেল বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে করা গেছে পরীক্ষা–নিরীক্ষা। জয়ের পথটা অবশ্য সহজ করে দিয়েছিলেন বোলাররাই।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ আজ আয়ারল্যান্ডকে অলআউট করেছে ১১৭ রানে। তারপর সেই রান তাড়া করতে জিততে লেগেছে ১৩.৪ ওভার, হারাতে হয়েছে মাত্র ২ উইকেট।

আগে ব্যাট করে শুরুটা মোটেও খারাপ করেনি আয়ারল্যান্ড। টিম টেক্টর আর পল স্টার্লিংয়ের হাত ধরে উদ্বোধনী জুটিতে এসেছে ২৪ বলে ৩৮ রান। সে জুটি ভাঙার আগে শরীফুল ইসলাম টানা তিন বাউন্ডারি খেয়েছিলেন টিম টেক্টরের কাছে। তবে ১০ বলে ১৭ করা টিমকে বোল্ড করেই প্রথম সাফল্য শরীফুলই এনে দেন।

১১ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান

উদ্বোধনী জুটির সেই ধারটা কমতে শুরু করে পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার আগেই। ষষ্ঠ ওভারে মাত্র ১ রানে মোস্তাফিজুর রহমান ফিরিয়ে দেন টিমের ভাই হ্যারি টেক্টরকে। আয়ারল্যান্ডের ভাঙনের শুরু সেখান থেকেই। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা।

পঞ্চম ওভারের পর টানা ৪১ বলে কোনো বাউন্ডারি পায়নি আইরিশরা। টি–টোয়েন্টিতে এমনটা হলে যা হওয়ার, হয়েছে তা–ই। সেই চাপে ভেঙে পড়া আইরিশরা ইনিংসের ১ বল বাকি থাকতেই অলআউট। কৃতিত্বটা পুরোপুরি বাংলাদেশের বোলারদের।

তাঁদের মধ্যেও আলাদা করে নজর কেড়েছেন রিশাদ হোসেন। একাদশে ফিরে পেয়েছেন ৩ উইকেট। তাঁর প্রথম শিকার কার্টিস ক্যাম্ফার —এক দারুণ গুগলিতে বোল্ড। গত এশিয়া কাপ থেকেই গুগলি করছেন তিনি। তবু ক্যাম্পারের মিডল স্টাম্প ছিটকে যাওয়া দেখেই যেন চট্টগ্রামের গ্যালারি থেকে ভেসে এল বাড়তি এক উচ্ছ্বাস!

ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার নিচ্ছেন তানজিদ হাসান

তবে আজকের দিনের সবচেয়ে বড় তারকা যদি কেউ হয়ে থাকেন, সেটা তানজিদ হাসান। ব্যাট হাতে হাফ সেঞ্চুরি করার আগে তিনি গড়েছেন এক দারুণ রেকর্ড। জর্জ ডকরেল, স্টিফেন ডেলানি, মার্ক অ্যাডায়ার, ম্যাথু হ্যামফ্রিস আর বেনজামিন হোয়াইটস—এই পাঁচজনের ক্যাচ নিয়েছেন তিনি! বাংলাদেশের কেউই এর আগে এক টি–টোয়েন্টি ম্যাচে পাঁচটি ক্যাচ নেননি।

পরে ব্যাট হাতেও জয়ের দিকে বাংলাদেশকে লম্বা পথ টেনে নিয়েছেন তানজিদ। কাল অবশ্য তাঁর উদ্বোধনী সঙ্গী পারভেজ হোসেনের বদলে নামানো হয় সাইফ হাসানকে। উদ্বোধনী জুটি সেই পরীক্ষায় খুব বেশি নম্বর পেয়ে পাস করতে পারেনি। ২৪ বলে ৩৮ রানের জুটি ভেঙেছে সাইফ ১৪ বলে ১৯ রান করে আউট হয়ে যাওয়ার পর। ওপেনার পারভেজ তিনেও নামেননি, আগের ম্যাচগুলোর মতো সেখানে এসেছিলেন অধিনায়ক লিটন দাসই। কিন্তু তিনিও ৬ বলে ৭ রান করে হ্যারি টেক্টরের বলে ক্যাচ তুলে দেন।

শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জয়টা এসেছে সেই পারভেজ–তানজিদ জুটিতে চড়েই। চতুর্থ উইকেটে দুজনের ৫০ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭৩ রানের জুটি নিশ্চিত করে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ও।

সিরিজসেরা মেহেদী হাসান

এই পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ ছক্কার তালিকায় বাংলাদেশিদের মধ্যে আগেই শীর্ষে উঠেছিলেন তানজিদ, দ্বিতীয় ছিলেন পারভেজ। আজ তিন ছক্কা মেরে তানজিদ বছর শেষ করেছেন ৪১ ছক্কা নিয়ে। পারভেজের ছক্কা ৩৪টি।

উত্থান–পতনে ভরা একটা বছর বাংলাদেশ শেষ করল এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ ১৫ টি–টোয়েন্টি জেতার রেকর্ড গড়ে। নতুন বছর শুরু হবে বিশ্বকাপের চ্যালেঞ্জ দিয়ে। তার আগে এমন এক সহজ–সুন্দর জয় শুধু স্বস্তিই নয়, দেবে একটু বাড়তি সাহসও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

আয়ারল্যান্ড: ১৯.৫ ওভারে ১১৭ (স্টার্লিং ৩৮, ডকরেল ১৯; মোস্তাফিজ ৩/১১, রিশাদ ৩/২১)। বাংলাদেশ: ১৩.৪ ওভারে ১১৯/২ (তানজিদ ৫৫*, পারভেজ ৩৩; টেক্টর ১/১৭, ইয়াং ১/৩০)। ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।  সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী। ম্যাচসেরা: তানজিদ হাসান। সিরিজসেরা: মেহেদী হাসান।