টানা চার হার, চার ম্যাচে ১৬ গোল হজম—এই দৃশ্যগুলো হয়তো এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদের মাথায়। এত তারকা নিয়ে গত মৌসুমে এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনার কাছে আক্ষরিক অর্থেই অপদস্থ হয়েছিল রিয়াল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে এমন ভরাডুবি কোনো দলকেই স্বস্তিতে রাখে না। তার ওপর প্রতিপক্ষের তরুণ খেলোয়াড় যদি খোঁচা দিয়ে কথা বলেন, তখন সেটা যেন কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা।
সম্প্রতি সেই কাজটাই করেছেন বার্সা ফরোয়ার্ড লামিনে ইয়ামাল। ক্লাসিকোর আগেই রিয়ালকে বলেছেন ‘চোর’ ও ‘ছিঁচকাঁদুনে’। জবাবে রিয়ালের দানি কারভাহাল বলেছেন, ইয়ামালের কথায় তাঁরা বিরক্ত। প্রেক্ষাপট আর প্রতিক্রিয়া মিলিয়ে বোঝাই যায়, আজ রোববার রাতে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচ শুরুর আগেই উত্তাপ ছড়িয়েছে। মানে মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে ধুন্ধুমার কিছু ঘটতেই পারে।
গত মৌসুমের দিকে তাকালে দেখা যায়, এল ক্লাসিকো এখন লা লিগার ভাগ্য নির্ধারণের ম্যাচে পরিণত হয়েছে। যেমন বার্সেলোনা লিগ জিতেছিল মাত্র ৪ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে। আর এল ক্লাসিকোর দুই লেগেই তারা জিতেছিল। সেই ৬ পয়েন্টই আসলে শিরোপা এনে দেয় কাতালানদের।
অন্যদিকে রিয়াল হেরেছিল মোট ৬ ম্যাচ—তার মধ্যে দুটোই এল ক্লাসিকো। শুধু তা–ই নয়, স্প্যানিশ সুপার কাপ আর কোপা দেল রেতেও বার্সার কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করে তারা। সব মিলিয়ে বার্সার বিপক্ষে মৌসুমজুড়ে চার ম্যাচে হেরে ঘরোয়া তিনটি ট্রফিই হারিয়েছে রিয়াল। তাই এবারের মৌসুমেও এই ম্যাচই হয়তো নির্ধারণ করবে লা লিগার ভাগ্য। ফলে দুই দলই মরিয়া, মাঠে লড়বে নিজেদের সবটা উজাড় করে।
টানা চার জয়—এই পরিসংখ্যানই যেকোনো দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। গত মৌসুমে রিয়ালের বিপক্ষে বার্সা ছিল দারুণ উজ্জীবিত এক দল। হার না মানার মানসিকতা দিয়েই তারা ম্যাচগুলো নিজেদের করে নিয়েছিল। এমনকি একবার ২–০ গোলে পিছিয়ে থেকেও ৪–৩ গোলে জিতে নিয়েছিল রোমাঞ্চকর এক ম্যাচ। এমন প্রত্যাবর্তন আত্মবিশ্বাস ছাড়া সম্ভব নয়। আজ রাতেও সেই আত্মবিশ্বাসই বাড়তি জ্বালানি দেবে হ্যান্সি ফ্লিকের শিষ্যদের।
রিয়াল মাদ্রিদ আজ নামছে প্রায় পূর্ণ শক্তি নিয়ে। দলে আছে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, কিলিয়ান এমবাপ্পে, জুড বেলিংহাম—সবাই ফিট, সবাই ছন্দে। চোটের কারণে নেই শুধু আন্তোনিও রুডিগার ও ডেভিড আলাবা।
অন্যদিকে বার্সার অবস্থা একেবারে উল্টো। বড় ধাক্কা লেভানডফস্কি ও রাফিনিয়াকে না পাওয়া। সঙ্গে মার্ক টের স্টেগেন, গাভি, দানি অলমো ও কুন্দেও নেই। এমন অবস্থায় বার্সা যে পিছিয়ে থাকবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
লা লিগায় জিরোনার বিপক্ষে লাল কার্ড দেখে নিষিদ্ধ হয়েছেন হ্যান্সি ফ্লিক। আপিল করেও লাভ হয়নি, এল ক্লাসিকোর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তিনি থাকছেন না ডাগআউটে। এমন চাপের ম্যাচে কোচের তাৎক্ষণিক নির্দেশনা না পেলে দল ভুগতে পারে। বিশেষ করে যখন হঠাৎ কৌশল বদলানো বা পজিশন ঠিক করার দরকার হয়, তখন ইয়ামালরা নিশ্চয়ই মিস করবেন ফ্লিককে।
গত মৌসুমে বার্সার হাই লাইন ডিফেন্সের বিপরীতে রিয়ালের আক্রমণভাগ হিমশিম খেয়েছিল। এমবাপ্পে একাই আটবার অফসাইডে পড়েছিলেন। এরপর ফ্লিক কৌশল বদলান। এবারও তিনি নতুন কোনো চমক দিতে পারেন রিয়ালকে।
তবে রিয়ালের ডাগআউটে এখন নতুন মুখ—কার্লো আনচেলত্তির জায়গায় জাবি আলোনসো। ‘জাবি বল’–এর অনুশীলনে বায়ার লেভারকুসেনে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। এখন রিয়ালের উইংয়েও সেই ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে। ভিনিসিয়ুস ও এমবাপ্পে একসঙ্গে যেন আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছেন। আজ রাতেও এই জুটি ফ্লিকের যেকোনো পরিকল্পনা গুলিয়ে দিতে পারে।
গত মৌসুমে বড় ম্যাচেই বেশি ভুগেছে রিয়াল। এবারও সেই গল্প বদলায়নি। লা লিগায় তাদের একমাত্র হার আতলেতিকোর বিপক্ষে—তা–ও ৫–২ গোলের ব্যবধানে। বড় ম্যাচে ভেঙে পড়া রুখতে আলাদা প্রস্তুতি নিতে হবে আলোনসোকে, নইলে আবারও ফিরে আসতে পারে সেই তিক্ত স্মৃতি।
তবে বার্সার অবস্থাও খুব ভালো নয়। চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির বিপক্ষে ২–১ গোলে হেরেছে তারা। অর্থাৎ বড় ম্যাচে দুই দলই কিছুটা নড়বড়ে।
তবে এল ক্লাসিকোর মতো ম্যাচকে পরিসংখ্যান বা হিসাব দিয়ে বিচার করা যায় না। এমন ম্যাচে একঝলক জাদুই গড়ে দিতে পারে ভাগ্য। আজ রাতেও হয়তো কোনো এক মুহূর্তে কারও পা বা মাথা ছুঁয়ে ঠিক হয়ে যাবে ম্যাচের ভাগ্য। কে হবেন সেই ভাগ্য নির্ধারক? ভিনি, এমবাপ্পে না ইয়ামাল—এটাই দেখার।