Thank you for trying Sticky AMP!!

৮২ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন পেলে

পেলেকে ঢাকায় আনতে চেয়েছিলাম

খবরটা শোনার পর থেকেই গোটা পৃথিবীর মন খারাপ। ব্যতিক্রম নই আমিও। আপনজন হারিয়ে ফেলার মতো ব্যথা অনুভব করছি। কীভাবে তাঁকে স্মরণ করব, বুঝতে পারছি না। আসলে ফুটবল–সম্রাট পেলের জীবনের ব্যাপ্তি এত বড় যে তাঁকে অল্প কথায় বর্ণনা করা কঠিন। তারপরও এই কিংবদন্তির সঙ্গে দেখা হওয়ার স্মৃতিটা মনে ভেসে উঠছে।

২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপের আগে ফিফা থেকে একটা চিঠি আসে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে)। বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ। বাফুফেতে সিদ্ধান্ত হয়, কেউ চাইলে ওই ড্রতে যেতে পারেন, তবে নিজ খরচে। সুযোগটা নিয়ে আমি গিয়েছিলাম। সঙ্গে গিয়েছিল প্রয়াত ফুটবলার গোলাম রাব্বানী হেলাল। আমি তখন বাফুফের সহসভাপতি। তো যা–ই হোক, ফ্রাঙ্কফুর্টে বিশ্বকাপের সেই ড্র অনুষ্ঠানে গিয়ে পেলের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে, ভাবিনি। ফর্মুলা ওয়ান কিংবদন্তি মাইকেল শুমাখারও ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে।

Also Read: শান্তিতে ঘুমান, ফুটবলের রাজা 

অতিথি আসনে পেলের এক সারি পেছনেই আমি বসেছিলাম। সুযোগ পেয়েছিলাম তাঁর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার। কিন্তু এমন একজন ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পরিচিত হওয়া সহজ নয়। নিরাপত্তাকর্মী থাকত তাঁর আশপাশে। সেই অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছিলেন পেলে। উঠে গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীকে বললাম, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, তাঁর সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।’ সৌভাগ্য অবশ্যই, নিরাপত্তাকর্মী সুযোগ দেন কথা বলার।

আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনে কিংবদন্তি বলে ওঠেন, ‘ভেরি গুড। তোমাদের দেশে ফুটবল কেমন হয়?’ আমি বললাম, ভালো। ব্রাজিল খুব জনপ্রিয় আমাদের দেশে। এরপর বলি, আপনি বাংলাদেশে আসুন। বলেন, ‘আমাকে আমন্ত্রণ জানাও আমি আসব।’ তারপর যখন ২০১১ সালে মেসিদের এনেছি ঢাকায়, পেলেকেও দাওয়াত দিই সে সময়। তাঁর আসার ইচ্ছা ছিল ঢাকায়। কিন্তু চিকিৎসকের ছাড়পত্র না পাওয়ায় আসা হয়নি। অসুস্থ থাকায় সে সময় তেমন একটা ভ্রমণ করতেন না।

Also Read: মেসি–রোনালদোদের জাদু আগেই দেখিয়ে গেছেন পেলে

পরশু রাতে পেলের মৃত্যুর সংবাদ পেতেই মনে পড়ল ডিয়েগো ম্যারাডোনার কথা। ম্যারাডোনা যখন কলকাতায় আসেন, তাঁর সঙ্গে দেখা হয়। দুই কিংবদন্তিকে কাছ থেকে দেখে দুই রকম লেগেছে। পেলে খুব ভদ্র মানুষ ছিলেন। তাঁর ভদ্রতা আর সৌজন্য আমাকে মুগ্ধ করেছিল। পেলে–দর্শনে প্রথমে আমার এটা মনে পড়ছে। খেলোয়াড় হিসেবে পেলে কেমন ছিলেন, বলাই বাহুল্য। কিন্তু মানুষটার বিনয় মনে রাখব আলাদাভাবে। ম্যারাডোনা ছিলেন উচ্ছল, প্রাণবন্ত। নিজের মতো চলতেন। দুজন দুই রকম।

Also Read: পেলের জীবনের নানা সময়, নানা ঘটনা

পেলে না ম্যারাডোনা—বিশ্ব ফুটবলে কে সেরা, এ নিয়ে অনেক বিতর্ক শুনেছি। আসলে দুজনই নিজ কীর্তিতে অমর থাকবেন। দুজনই মহান। ম্যারাডোনার পর পেলে—খুব কাছাকাছি সময়ে ফুটবলের সবচেয়ে বড় দুই কিংবদন্তি চলে গেলেন। বিশ্ব ফুটবলের জন্য এটা খুব দুঃখের। পেলের মতো আকাশসম ব্যক্তিত্বের চলে যাওয়া মানে ফুটবল অনেকটা শূন্য হয়ে গেল। এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। তবে কিছু যাওয়া মানে চিরতরে যাওয়া নয়, পেলে আছেন এবং থাকবেন। শান্তিতে ঘুমান কিংবদন্তি।


লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন

Also Read: পেলে, অনন্তলোকে ম্যারাডোনা আপনাকে বরণ করবেন