আবাহনীর হারে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন
আবাহনীর হারে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন

আবাহনীর হারে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন, পেশাদার লিগে প্রথম শিরোপা

তিন ম্যাচ হাতে রেখেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা নিশ্চিত করার সুযোগ ছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সামনে—শুধু আজ আবাহনী লিমিটেডকে হারাতে হতো ফর্টিস এফসির।

সেই উত্তেজনায় আজ সকাল থেকেই দেশের ফুটবলপ্রেমীদের চোখ ছিল কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে। তবে সবচেয়ে বেশি তাকিয়ে ছিল মতিঝিলের ক্লাব মোহামেডান। অবশেষে শেষ হয়েছে তাদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষা—ফর্টিসের কাছে ২-১ গোলে হেরে গেছে আবাহনী, আর সেই হারে ২৩ বছর পর দেশের শীর্ষ লিগে চ্যাম্পিয়ন হলো মোহামেডান।

মোহামেডান ক্লাব ভবনের কোচ ও ম্যানেজারের কক্ষে তখন টানটান উত্তেজনা। কোচ আলফাজ আহমেদ একটি টেবিলে রাখা মোবাইলে ইউটিউবে লাইভ ম্যাচ দেখছিলেন, পাশে ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব ও সহকারী কোচ আবদুল কাইয়ুম সেন্টু। ম্যাচে ফর্টিস পেনাল্টি থেকে এগিয়ে যাওয়ার পরও আলফাজ বললেন, ‘মনে হয় না ফর্টিস জিতবে, হয়তো ড্র হবে।’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ড্র নয়, হেরেই মাঠ ছাড়ল আবাহনী। ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়া আবাহনী ১০ জনের ফর্টিসের বিপক্ষে একটি গোল শোধ করলেও সমতায় ফিরতে পারেনি। অবশ্য ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই ঘাড়ের ব্যথার কারণে থেরাপি নিতে ক্লাব ছেড়ে যান মোহামেডান কোচ আলফাজ।

২০০২ সালে সর্বশেষ ঢাকার শীর্ষ লিগ জিতেছিল মোহামেডান। এরপর দেশের অন্যতম বড় ক্লাব হয়েও বারবার হয়েছে হতাশ। ২০০৭ সালে চালু হওয়া পেশাদার লিগে একসময় অবনমন শঙ্কাতেও পড়েছিল তারা। সেই ক্লাবই এবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এবারের ১৮ ম্যাচের লিগে মাত্র ১৫ ম্যাচে শেষেই নিশ্চিত করেছে শিরোপা, যা এক ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের গল্প।

আজকের ম্যাচে ছিল নাটকীয়তা। ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাতের কারণে ম্যাচ শুরুর ১৫ মিনিট পর খেলা বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টির কারণে মাঠে পানি জমে যায়, ফলে স্বাভাবিক ফুটবল খেলতে পারেনি কোনো দলই। ১৯তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ফর্টিসকে এগিয়ে দেন পা ওমর জোবে। সুমন রেজার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে ৭৫ মিনিটে লাল কার্ড দেখেন ফর্টিসের মানিক, হলুদ কার্ড পান সুমন। ৭৬ মিনিটে ফর্টিসের জাল্লো করেন দ্বিতীয় গোল। ৮০ মিনিটে আবাহনীর মোহাম্মদ হৃদয় একটি গোল শোধ করলেও তা যথেষ্ট ছিল না।

শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গে মোহামেডান ক্লাবে শুরু হয় উল্লাস। মোবাইলে খেলা দেখছিলেন খেলোয়াড়, সমর্থকেরা। যাঁরা মাঠে ছিলেন না, তাঁরাও যেন ঢাকায় বসেই গোলের আনন্দে একাকার। এই শিরোপা জয়ে বড় অবদান রাখা সুলেমান দিয়াবাতে ও সানডেরা ক্লাব পতাকা হাতে যোগ দেন সমর্থকদের উল্লাসে। স্লোগান ওঠে—মোহামেডান! মোহামেডান!

সাদা–কালো শিবিরে ফিরে এসেছে শিরোপার সোনালি হাসি। ২২ বছরের অপেক্ষার শেষ হলো এক মেঘাচ্ছন্ন দিনে, আবেগ ও প্রত্যাবর্তনের নাটকীয় এক পড়ন্ত বিকেলে।