বাফুফে ভবনের তৃতীয় তলার সংবাদ সম্মেলনকক্ষে কোচ হাভিয়ের কাবরেরার পাশে বসে আছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। সামনে সারি সারি সাংবাদিক, পেছনে অসংখ্য টিভি ক্যামেরা।
ভুটানের বিপক্ষে আগামীকাল সন্ধ্যা সাতটায় জাতীয় স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ। অধিনায়ক হিসেবে জামাল কথা বললেও তাঁকে কি খেলাবেন কোচ?
ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে কোচ জামালকে এক মিনিটের জন্যও মাঠে নামাননি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে—তাহলে কি অধিনায়ক হয়েও জামালের জায়গা এখন বেঞ্চে? প্রশ্ন শুনে হালকা হেসে জামালের উত্তর, ‘এটা আমার হাতে নেই। কোচ জানেন।’
দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, প্রতিপক্ষ ভুটান বলে হয়তো জামালকে মাঠে নামাবেন কোচ। যদিও পুরো সময় খেলানোর সম্ভাবনা কম। তবে সিঙ্গাপুর ম্যাচে নামাবেন কি না, বলা কঠিন।
২০১৩ সালে প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে বাংলাদেশ দলে প্রথম আসেন জামাল ভূঁইয়া। তখন দলে তিনি ছিলেন একমাত্র প্রবাসী। এখন সেই সংখ্যা ছয়ে পৌঁছেছে। ২০১৮ সাল থেকে তিনি জাতীয় দলের অধিনায়ক।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একাদশে তাঁর উপস্থিতি নিয়মিত নয়। যে খেলোয়াড় একসময় মাঝমাঠের চালক ছিলেন, সেই তিনি এখন অনেকটা দর্শকের ভূমিকায়। তারকা থেকে যেন ধীরে ধীরে ছায়ায় চলে যাওয়া এক চরিত্র।
তবু সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হিসেবে জামালই এসেছেন কোচের পাশে। সাম্প্রতিক সময়ে নিয়মিত মাঠে না থাকলেও নেতৃত্বের ভূমিকায় তাঁর এখনো ডাক পড়ে। অথচ গত ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে শিলংয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে পুরো সময় বেঞ্চেই ছিলেন। লম্বা সময় ধরে অধিনায়কত্ব করা একজনের জন্য এমন অভিজ্ঞতা বিব্রতকরই।
তবে জামালের কণ্ঠে আক্ষেপের চেয়ে আশার সুর বেশি, ‘আমি যখন দলে এসেছিলাম, তখন শুধু আমি ছিলাম। এখন ছয়জন প্রবাসী ফুটবলার দলে। এটা একটা অগ্রগতি। এতে দল শক্তিশালী হয়েছে।’
জাতীয় দলে প্রবাসী ফুটবলারের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জামাল টেনে আনেন ফ্রান্সের উদাহরণ, ‘ফ্রান্স দলে অনেক খেলোয়াড় আছে, যারা ফরাসি বংশোদ্ভূত নয়। ফ্রান্সের নাগরিকত্ব নিয়ে খেলে তারা বিশ্বকাপও জিতেছে। আমাদের দলেও এখন এই বৈচিত্র্য আসছে। এটা ভালো দিক।’
৩৫ বছরে পা রাখা জামাল এখন ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্নে। হয়তো আর বেশি দিন দেখা যাবে না তাঁকে লাল-সবুজের জার্সিতে মাঠে ছুটতে। কিন্তু ভবিষ্যতের জাতীয় দলের ভিত গড়ে দেওয়ার পেছনে তাঁর অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই।