বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের ২০২৫ মৌসুমের দলবদল এখন শেষ। দীর্ঘদিন ধরে গুঞ্জন, আলোচনা ও বাজারে ঘুরে বেড়ানো খেলোয়াড়দের তালিকা অবশেষে বাফুফের কাছে জমা পড়েছে পরশু। প্রিমিয়ার লিগের ১০টি ক্লাব বাফুফেতে স্থানীয় ও বিদেশি খেলোয়াড় তালিকা জমা দিয়েছে। সেই তালিকায় আছে মোট ৪৮ জন বিদেশি ফুটবলারের নাম। যাঁদের ১১ জন সার্কভুক্ত দেশের, বাকি ৩৭ জন সার্কের বাইরের। তবে নতুন নিয়মে সার্কভুক্ত দেশের ফুটবলাররা বিবেচিত হচ্ছেন দেশি হিসেবে।
সার্কভুক্ত দেশের খেলোয়াড়দের ১১ জনের মধ্যে ৮ জনই নেপালি। এর মধ্যে ব্রাদার্স ইউনিয়নই নিয়েছে ৪ জনকে—জোগেশ গুড়ং, সানিশ শ্রেষ্ঠা, অঞ্জন বিস্তা ও আরিক বিস্তা। বাংলাদেশ পুলিশ এফসি নিয়েছে নেপালের গোলরক্ষক ও অধিনায়ক কিরণ কুমার লিম্বু ও ফরোয়ার্ড আয়ুশ ঘালানকে। ফর্টিসে নাম লিখিয়েছেন নেপালের ডিফেন্ডার অনন্ত তামাং। রহমতগঞ্জে নেপালের ডিফেন্ডার অভিষেক লিম্বু।
সার্কের বাকি তিনজন আসছেন ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও ভারত থেকে। ভুটানের মিডফিল্ডার ওয়াংচুক শেরিং নাম লিখিয়েছেন পুলিশে, শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ও গোলরক্ষক সুজান পেরেরা ফর্টিস এফসিতে ও ভারতের প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী আরামবাগে। ভারতের মিঠুন সামান্তাকে আনার কথা ছিল আরামবাগের। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে তাঁর নাম জমা দেওয়া যায়নি।
সার্কের বাইরের ৩৭ জন ফুটবলারের মধ্যে বরাবরের মতো আফ্রিকানদের আধিক্য। নাইজেরিয়া, ঘানা, আইভরিকোস্ট, মালি, গাম্বিয়া ইত্যাদি দেশের খেলোয়াড়ের নাম জমা পড়েছে। লাতিন আমেরিকার ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ৮-১০ জন খেলোয়াড়কে দুই–তিন বছর আগেও দেখা গেছে বাংলাদেশের লিগে। এবার আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় নেই। ব্রাজিলের আছে তিন-চারজন।
গত লিগের চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানে এবার বিদেশি খেলোয়াড় চারজন। এর মধ্যে তিনজনই ঘানার—বানার্ড মরিসন, এলি কেকে এবং গত লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা স্যামুয়েল বোয়াটেং। উজবেকিস্তানের মোজাফরভকে রেখে দেওয়া হয়েছে। ব্রাদার্স থেকে ডিফেন্ডার রহমত ও ফকিরেরপুল থেকে রায়ায়েল টুডুকে আনা হয়েছে। দল ছেড়েছেন তিনজন বিদেশি—দিয়াবাতে, সানডে ও টনি। নতুন দল নিয়ে কোচ আলফাজ বলছেন, ‘নতুন দলটি মাঝারি সারির হয়েছে। বিদেশিদের পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করবে আমরা কতটা ভালো করতে পারব।’
গত লিগের রানার্সআপ আবাহনী শক্তিশালী দল গড়েছে। বিদায়ী মৌসুমে মোহামেডানের সাফল্যের নায়ক দিয়াবাতেকে নিয়ে এসেছে তারা। নাইজেরিয়ার এমেকাকে রেখে দেওয়া হয়েছে। নতুন যোগ হচ্ছেন ব্রাজিলের ব্রুনো। গতবার আন্তর্জাতিক ছাড়পত্র না আসায় তিনি এএফসি কাপে খেলতে পারেননি আকাশি–নীলের হয়ে।
ঘরোয়া খেলোয়াড়দের মধ্যে আক্রমণকে শক্তিশালী করতে শেখ মোরছালিন, আল আমিন ও কাজেম শাহকে দলে ভিড়িয়েছে আবাহনী। ব্রাদার্স থেকে যুক্ত হয়েছেন সুশান্ত ও আলমগীর। শেষ মুহূর্তে এসেছেন ব্রাদার্সের গোলকিপার পাপ্পু হোসেন। গত লিগে আবাহনী সবচেয়ে কম গোল খেয়েছিল। গোলকিপার মিতুল মারমা, ইয়াছিন, কামরুল, মুরাদ, শাকিল, পাপন সিংদের তাই ধরে রাখা হয়েছে।
জাতীয় ও অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ৯–১০ জন খেলোয়াড় আছেন আবাহনীতে। এবারের একাদশে একজন অনূর্ধ্ব-২০ খেলোয়াড় খেলানো বাধ্যতামূলক, সেই পজিশনে দলে আছেন মিরাজুল। আবাহনী দলে কোনো দিকে ঘাটতি নেই বলেই মনে হচ্ছে। গতবারের অধিনায়ক মোহাম্মদ হৃদয়, ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফায়েল ও শাহরিয়ার ইমন দল ছাড়লেও আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপু তাই দাবি করছেন, ‘গতবারের চেয়ে এবারের দল আরও শক্তিশালী হয়েছে।’
গত লিগে তৃতীয় হওয়া বসুন্ধরা কিংস দলে এবার নতুন চমক দিয়েছে কিউবা মিচেলকে দলে নিয়ে। ইংল্যান্ড বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ১৯ বছরের প্রবাসী এই ফুটবলার এরই মধ্যে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দলে ডাক পেয়েছেন। জাতীয় দলে কয়েক বছর ধরে ব্রাত্য এবং গত বছর রহমতগঞ্জে খেলা স্ট্রাইকার নাবিব নেওয়াজ জীবন এবার কিংসে খেলবেন, আবাহনীর গতবারের অধিনায়ক মোহাম্মদ হৃদয়ও। কিংসে চার বিদেশি এমানুয়েল টনি, দরিয়েলতন গোমেজ, রাফায়ালে আগস্ত ও ইমানুয়েল সানডে। চারজনই ঢাকার মাঠের চেনা মুখ।
জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া থাকছেন ব্রাদার্সেই। দেশের বাইরের মোট ৯ জন খেলোয়াড় নিয়েছে গোপীবাগের দলটি। সংখ্যাটি সব দলের মধ্যে সর্বোচ্চ। দলবদল শেষে যা মনে হচ্ছে, তাতে শিরোপা লড়াই বসুন্ধরা কিংস, আবাহনী ও মোহামেডানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। যদিও ফুটবল মাঠে চমক সব সময়ই সম্ভব। গতবার মোহামেডানের চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাওয়াই যার বড় প্রমাণ। ব্রাদার্স ইউনিয়নে নেপালিদের সমন্বয় বা ছোট দলগুলোর আফ্রিকান আক্রমণভাগ নতুন মৌসুমকে অনিশ্চিত ও রোমাঞ্চকর করে তুলতে পারে।