‘হকির হামজা’ খ্যাত আমিরুল
‘হকির হামজা’ খ্যাত আমিরুল

‘হকির হামজা’ আমিরুলের প্রিয় ফুটবলার মেসি

আমিরুল ইসলামের নেশা হতে পারে হকি, কিন্তু পছন্দের খেলার তালিকায় ফুটবলের অবস্থানটাও বেশ ওপরে। শৈশবে বড় একটা সময় কেটেছে ফুটবল মাঠে, ফুটবলার হতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু নিয়তি তাঁকে হকির কোর্টে টেনে আনে।

কে এই আমিরুল, তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। ভারতের চেন্নাই ও মাদুরাইয়ে হচ্ছে জুনিয়র হকি বিশ্বকাপের ১৪তম আসর। টুর্নামেন্টে এবারই প্রথম অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ হকি দল।

গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচের একটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫-৩ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ, আরেক ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ড্র করেছে ৩-৩ গোলে। দলের ফলাফল যা–ই হোক; দুই ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করে এবং ম্যাচসেরা হয়ে এখন আলোচনায় আমিরুল, সতীর্থরা যাঁকে ডাকেন ‘হামজা’ বলে।

দেশের ফুটবলে হামজা চৌধুরীকে ঘিরে উন্মাদনা চলছে। আমিরুলের চুল অনেকটা হামজার মতো, স্টিক হাতে পারফরম্যান্সও দুর্দান্ত। সতীর্থদের তাঁকে মজা করে ‘হামজা’ ডাকাটা তাই বাড়াবাড়ি নয়।

আমিরুল তো বরং এই ডাক উপভোগই করতে শুরু করেছেন, ‘হামজা ভাই বাংলাদেশের ফুটবলের ব্র্যান্ড। তাঁর মাধ্যমে সারা বিশ্ব আমাদের ফুটবলকে চিনছে। তাঁর সঙ্গে আমার তুলনা হয় না। তবে কেউ এ নামে ডাকলে ভালো লাগে, যদিও আমার প্রিয় ফুটবলার মেসি, আর আমি আর্জেন্টিনার সাপোর্টার।’

হকিতে দারুণ নৈপূন্য দেখাচ্ছেন আমিরুল

আমিরুলের আশা, দেশের ফুটবলে যেমন এখন একটা উত্থানপর্ব চলছে, এমন দিন একদিন দেশের হকিও দেখবে, ‘হকির পর ফুটবলই আমার প্রিয় খেলা। হকি খেলোয়াড় না হলে ফুটবল খেলতাম। ফুটবলে এখন হামজা ভাইকে নিয়ে সবার আগ্রহ। আমি চাই, হকিতেও এমন দিন আসুক।’

হকির সঙ্গে আমিরুলের প্রথম সাক্ষাৎ ২০১৫ সালে, তখন তিনি ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। একদিন কোচিং শেষ করে বাড়িতে ফেরার পথে দেখলেন, স্কুলমাঠে খেলা চলছে। প্রথম দিকে খেলাটা আমিরুল ঠিকভাবে বুঝতেন না, খেলা দেখে একটু অবাকও হতেন। লাঠি দিয়ে একটা ছোট বলকে তাড়া করা, আবার টেনে নিয়ে যাওয়া, লক্ষ্য ভেদ করা—এসবই তাঁকে খেলাটার প্রতি আরও কৌতূহলী করে তোলে।

ধীরে ধীরে হকির প্রতি ভালো লাগা তৈরি হয়। একসময়ের অচেনা হকি হয়ে যায় চেনা। কাল ভারত থেকে মুঠোফোনে যেন ফিরে গেলেন সেই স্মৃতিতে, ‘তখন তো খুব ছোট ছিলাম। প্রথম দিকে খেলা দেখে কিছুই বুঝতাম না। একেবারে অচেনা লাগত, তবে অনেক মজা পেতাম। আমার চাচা নুরুল ইসলাম ছিলেন হকির কোচ। তিনি জেলা পর্যায়ে কোচিং করাতেন। তিনি আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন।’

দেশের ফুটবলে হামজা চৌধুরীকে ঘিরে উন্মাদনা চলছে। আমিরুলের চুল অনেকটা হামজার মতো, স্টিক হাতে পারফরম্যান্সও দুর্দান্ত।

জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে করা ছয় গোলের সবগুলোই পেনাল্টি কর্নার থেকে করেছেন আমিরুল। পেনাল্টি কর্নার থেকে প্রতিপক্ষের জাল কাঁপিয়ে বেশ আনন্দই পান তিনি, এটা তাঁর শক্তির জায়গাও, ‘পেনাল্টি কর্নার আমার শক্তির জায়গা। এভাবে গোল করতে পারলেই বেশি ভালো লাগে। অনুশীলনে পেনাল্টি কর্নার নিয়ে বেশি কাজ করি।’

আজ গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। আমিরুল এই ম্যাচেও আছেন দারুণ কিছুর আশায়, ‘আমরা স্বাভাবিক খেলাটা খেলব। প্রতিপক্ষ যে–ই হোক, কোচের পরিকল্পনা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারলে অবশ্যই ভালো কিছু হবে।’
হকি খেলার পাশাপাশি পড়াশোনায়ও নিয়মিত আমিরুল।

২০১৬ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত বিকেএসপির ছাত্র ছিলেন। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ‘যখন খেলা থাকে, তখন পড়াশোনায় সময় কম দিই, আবার যখন খেলা কম থাকে, তখন পড়াশোনা করি’—এভাবে চলছে ‘হকির হামজা’র জীবন।