
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আদেশ দিলে রাশিয়াকে প্রতিরোধ করা এবং ইউক্রেনে সম্ভাব্য উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা (নো-ফ্লাই জোন) বাস্তবায়নের জন্য আগাম প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এজন্য ভূমধ্যসাগরে মার্কিন রণতরি ইউএসএস ট্রুম্যান মোতায়েন করা হচ্ছে। মার্কিন নৌবাহিনীর সেক্রেটারি কার্লোস ডেল তোরো এই তথ্য জানিয়েছেন।
মার্কিন গণমাধ্যম পলিটিকোকে ডেল তোরো বলেছেন, ‘ভূমধ্যসাগরে এখন অসংখ্য রুশ জাহাজ এবং সাবমেরিন রয়েছে। এ কারণে তাদের প্রতিরোধ করতে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সমান উপস্থিতি থাকা গুরুত্বপূর্ণ। পুতিন যে একমাত্র জিনিস বোঝেন, তা হলো শক্তি।’
বর্তমানে আইওনিয়ান সাগরে মার্কিন এ রণতরি অবস্থান করছে। এটি ইতালি ও গ্রিসের জলসীমায় রয়েছে। ভূমধ্যসাগরে মার্কিন বাহিনী ষষ্ঠ নৌবহরের অধীনে কাজ করে। এর সদর দপ্তর ইতালির নেপলসে। এর অধীনে ৪০টি জাহাজ এবং ১৭৫টি বিমান রয়েছে।
ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় দেশটির বাহিনীর সঙ্গে রাশিয়ার বাহিনীর লড়াই অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর মাকারিভ পুনর্দখলে নেওয়ার দাবি করেছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
এদিকে রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধ থামাতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসার জন্য আবারও আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ন্যাটোসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি সমঝোতায় রাজি বলেও জানান। এর আগে সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পুতিন প্রয়োজনে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার করতে পারেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খারকিভ ও মারিউপোলে রুশ বাহিনীর সঙ্গে তাদের বাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে। শহর দুটিতে অন্তত ১০টি হাসপাতাল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। ওদেসার উপকণ্ঠে রাশিয়ার নৌবাহিনী ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করেছে। কৃষ্ণসাগরের সঙ্গে ইউক্রেনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে এই হামলা চালানো হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, কিয়েভের পশ্চিম উপকণ্ঠের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর মাকারিভ পুনর্দখলে নিয়েছে তাদের বাহিনী। রুশ বাহিনীর সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ের পর তারা এই সফলতা পেয়েছে। শহরটি পুনর্দখলে নেওয়ায় একটি প্রধান হাইওয়েতে ইউক্রেন বাহিনীর চলাচল উন্মুক্ত হয়েছে, যা রুশ বাহিনীর অগ্রসর ঠেকাতে সাহায্য করবে।
ইউক্রেনে হামলায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কোয়াড সদস্যদের মধ্যে একমাত্র ভারতের অবস্থানই ‘কিছুটা নড়বড়ে’ বলে মন্তব্য করেছেন বাইডেন। রাশিয়া ও পশ্চিমের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে চলার চেষ্টা করছে ভারত।
রাশিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কোয়াডের অন্য তিন সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। ভারত কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি, এমনকি এ হামলার জন্য রাশিয়ার নিন্দাও জানায়নি। ভারতের সামরিক সরঞ্জামের বড় সরবরাহকারী রাশিয়া। ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর থেকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে ভারতকে চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। তবে দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া থেকে বিরত থেকেছে নয়াদিল্লি। অবশ্য পুতিনের সঙ্গে আলাপে যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার টেবিলে ফিরতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।
সোমবার এক বিজনেস ফোরামে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইঙ্গিত করে বাইডেন বলেন, ‘তাঁর আগ্রাসনের জবাবে ন্যাটো এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মাধ্যমে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। কোয়াড সদস্যদের মধ্যে ভারতের নড়বড়ে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি বাদ দিলে জাপান কিন্তু খুবই শক্ত অবস্থান নিয়েছে, পুতিনের আগ্রাসন ইস্যুতে যেমনটা অস্ট্রেলিয়াও করেছে।’
ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে বলে মন্তব্য করেন বাইডেন। এ কারণে ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিন রাসায়নিক কিংবা জৈব অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি প্রায় এক মাস ধরে চলতে থাকা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সমঝোতার জন্য প্রস্তুত। সোমবার ইউক্রেনের এক টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মস্কোর দাবি অনুযায়ী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঞ্চলগুলো নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। রুশ সেনা প্রত্যাহারের বিনিময়ে কিয়েভ তার ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করতে ইচ্ছুক। তবে কোনো চুক্তির আগে অবশ্যই তা গণভোটের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো বন্দী বিনিময় শুরু করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। প্রথম দফায় রাশিয়ার ৯ সেনাসদস্যকে মুক্তি দিয়েছে ইউক্রেন। এ কথা জানিয়েছেন রাশিয়ার মানবাধিকার কমিশনার তাটিয়ানা মোশকালকোভা। গতকাল মঙ্গলবার রুশ রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা তাসের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
ইউক্রেনের মেলিতপোল শহরের মেয়রকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর সম্প্রতি তাঁকে ছেড়ে দিয়েছে রুশ বাহিনী। এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার মানবাধিকার কমিশনার তাটিয়ানা মোশকালকোভা বলেছেন, রুশ বাহিনীর হাতে বন্দী মেলিতপোলের মেয়রের বিনিময় রাশিয়ার ৯ সেনাকে মুক্তি দেওয়ার কথা নিশ্চিত করছেন তিনি।