ইউরোপে সামরিক শক্তি বাড়াল ন্যাটো

ইউক্রেনে প্রাণঘাতী সামরিক সরঞ্জাম পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র
ফাইল ছবি : কিয়েভে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের টুইটার থেকে নেওয়া

ইউক্রেনে সম্ভাব্য রুশ সামরিক হামলার আঁচ পেয়ে পূর্ব ইউরোপে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। ওই অঞ্চলে যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ প্রস্তুত রেখেছে জোটটি। এদিকে রাশিয়ার হামলার আশঙ্কায় কিয়েভে নিজেদের দূতাবাসের সব কর্মীর পরিবারকে দ্রুত ইউক্রেন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া এ মুহূর্তে রাশিয়া ভ্রমণ না করতে মার্কিন নাগরিকদের সতর্ক করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যও কিয়েভে নিজেদের দূতাবাসের কর্মীদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। জাপানও ইউক্রেন থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।

ন্যাটোর মহাসচিব জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গ গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ন্যাটো তার মিত্রদের রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রাখবে। ইউরোপের পূর্বাঞ্চলের মিত্রদের রক্ষায় সামরিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয়টিও এসব পদক্ষেপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। আমাদের নিরাপত্তা পরিবেশে যেকোনো ধরনের হুমকি মোকাবিলায় আমরা জবাব দিতে সর্বদা প্রস্তুত।’

রুশ ‘আগ্রাসন’ মোকাবিলায় ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রাণঘাতী সামরিক সহায়তার প্রথম চালান ইউক্রেনে পাঠিয়ে। এ রকম সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

বেশ কিছুদিন ধরেই ইউক্রেন সীমান্তজুড়ে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে মস্কো। সম্প্রতি সেই তৎপরতা আরও বেড়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেনসহ পশ্চিমা বিশ্বের দাবি। এ অবস্থায় ন্যাটো সম্প্রতি বাল্টিক অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। স্পেন নৌশক্তি বাড়িয়েছে। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেদারল্যান্ডস যুদ্ধজাহাজ ও স্থল সামরিক বাহিনী প্রস্তুত রেখেছে।

ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দফা বৈঠক করলেও সেটা যে বেশি কাজে আসেনি, তা এখন বোঝা যাচ্ছে। ইউক্রেন নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পাশাপাশি সম্প্রতি জেনেভায় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠক করেন। বৈঠকের পর দুই দেশ ইউক্রেনে সংকট সমাধানে আলোচনা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুত দেয়। কিন্তু পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে শুরু করে গত শনিবার থেকে। ওই দিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রথম সামরিক সহায়তার চালান কিয়েভে পৌঁছায়। এরপর মস্কো সামরিক কার্যক্রম আরও জোরদার করতে শুরু করে।

রুশ হামলা প্রতিরোধে ইউক্রেনে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্য

এর মধ্যে গত রোবববার আকস্মিকভাবে ইউক্রেনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের দেশটি ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। অতিগুরুত্বপূর্ণ নয়, এমন দূতাবাসকর্মীদের ইউক্রেন ছাড়ার অনুরোধ করে এ দপ্তর। এ ছাড়া মার্কিন নাগরিকদের দ্রুত ইউক্রেন ত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করতে আহ্বান জানিয়েছে বাইডেন সরকার। ইউক্রেনসহ এ অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে এসব নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে রাশিয়া।

বেশ কিছুদিন ধরেই ইউক্রেন সীমান্তজুড়ে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে মস্কো। সম্প্রতি সেই তৎপরতা আরও বেড়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেনসহ পশ্চিমা বিশ্বের দাবি। এ অবস্থায় ন্যাটো সম্প্রতি বাল্টিক অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, কিয়েভে দূতাবাস খোলা থাকবে। তবে প্রেসিডেন্ট কার্যালয় হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে, যেকোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। এই কর্মকর্তারা বলেছেন, এমন আকস্মিক ঘটনা ঘটলে নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার মতো অবস্থায় না–ও থাকতে পারে সরকার। সেই কারণে ইউক্রেন ত্যাগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপকে ‘অপরিপক্ব’ হিসেবে উল্লেখ করেছে ইউক্রেন। গতকাল দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওলেগ নিকোলেঙ্কো বলেছেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া পদক্ষেপকে অপরিপক্ব হিসেবে মনে করছি।’ যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে অতি সতর্কতার প্রদর্শন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিদেশে সামরিক অস্ত্র বিক্রির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ারের ডোভার এয়ার ফোর্স ঘাঁটি থেকে ইউক্রেনের উদ্দেশে গোলাবারুদ, অস্ত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে

যদিও রাশিয়া বরাবরই বলে আসছে, ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা তাদের নেই। তবে এরপরও ইউক্রেন ও রাশিয়া ভ্রমণের ব্যাপারে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্প্রতি উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় রাশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা হয়রানির শিকার হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের সহায়তা করার জন্য ওয়াশিংটনের হাতে সীমিত ক্ষমতা থাকবে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, ইউক্রেনের কিয়েভে তাদের দূতাবাসের কিছু কর্মী ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। রাশিয়ার হামলার হুমকির কারণেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে জরুরি কাজের জন্য দূতাবাস খোলা থাকবে।

এদিকে জাপানের মন্ত্রিসভার ঊর্ধ্বতন সদস্য, চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি হিরোকাজু মাৎসুনো গতকাল নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অনাহূত পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কার আলোকে পূর্ব ইউরোপের সেই দেশ থেকে অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ জাপানি নাগরিকদের ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং সম্পর্কিত অন্যান্য দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাওয়ার পাশাপাশি পরিস্থিতির রদবদলের ওপর জাপান সরকার নজর রেখে যাবে।