সপ্তাহের মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতে তিনটি হামলা, পতাকা তুলল উলফা

দীর্ঘদিন ধরেই আসামে উলফার তৎপরতা চলছে। তাদের ঠেকাতে মাঝেমধ্যেই অভিযান চালিয়ে উলফা কর্মীদের গ্রেপ্তার করে ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
ফাইল ছবি: এএনআই

ভারতের আসাম ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যে জঙ্গি তৎপরতা বেড়েছে। গত সোমবার ছিল ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস। ওই দিন উত্তর আসামের লখিমপুর জেলার বগিনদী রেলস্টেশনে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম-ইনডিপেনডেন্ট) পতাকা দেখা গেছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল প্রদেশে তিনটি বড় ধরনের হামলায় আহত হয়েছেন ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য। এর আগে গত শনিবার আসাম, মনিপুর, ত্রিপুরা ও মেঘালয় রাজ্যে স্বাধীনতা দিবস বর্জনের ডাক দেয় উলফা (আই) এবং নাগাল্যান্ডের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগালিম-খাপলাং সংগঠনের ইউং আং গোষ্ঠী (এমএসসিএন-কে)।

স্বাধীনতা দিবস বর্জনের আহ্বানের কারণে রাজ্যগুলোর গ্রামাঞ্চলের অনেক জায়গাতেই দোকানপাট বন্ধ ছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। অপর দিকে স্বাধীনতা দিবস পালনের প্রস্তুতির মধ্যেই মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত নাগাল্যান্ডের মন জেলায় ১৯ নম্বর আসাম রাইফেলসের শিবিরে হামলা চালায় উলফা (আই) এবং এমএসসিএন-কে। এতে আসাম রাইফেলসের দুই সদস্য আহত হন।

আসাম রাইফেলসের পক্ষ থেকে আক্রমণের সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘নিষিদ্ধ সংগঠনের জঙ্গিরা ভালো রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন আসাম রাইফেলসের দুজন সদস্য। আহত সদস্যদের জোরহাটে বিমানবাহিনীর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’

স্বাধীনতা দিবসের এক সপ্তাহ আগে আসাম রাইফেলসের ওপরে আরও অন্তত দুটি বড় ধরনের হামলা করেছে উলফা (আই) ও এনএসসিএন-কে। প্রথম আক্রমণটি করা হয় ভারত–মিয়ানমার সীমান্তে অরুণাচল প্রদেশের পাংশু গিরিখাতে। এই গেরিলা আক্রমণে সেনাবাহিনীর একজন তরুণ কর্মকর্তা আহত হন। দ্বিতীয় আক্রমণটি হয় মিয়ানমার সীমান্তের নকলাক এলাকায়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময় হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আসাম রাইফেলসের ১৪ নম্বর ইউনিটের ওপর হামলা করা হয়েছিল। তবে এতে কেউ হতাহত হননি।

উলফার পতাকা উত্তোলন

দীর্ঘ ৪৩ বছরের ইতিহাসে উলফা (আই) শুধু গত বছর স্বাধীনতা দিবস বর্জনের ডাক দেয়নি। কিন্তু এ বছর তারা স্বাধীনতা দিবসে মানুষকে রাস্তায় বের না হওয়ার নির্দেশ দিল। এর থেকে মনে করা হচ্ছে, পরেশ পড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন উলফাকে (আই) এখনই আলোচনার টেবিলে আনতে পারবে না কেন্দ্র সরকার।

উলফার যে অংশটি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে, সেটির নাম আলফা। দলটির প্রধান অরবিন্দ রাজখোয়া জুলাই মাসের শেষ দিকে ভারতের একটি ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাঁরা আশা করছেন ১৫ আগস্টের মধ্যে আলফা এবং কেন্দ্রের মধ্যে চূড়ান্তভাবে শান্তিচুক্তি সই হবে।

অরবিন্দ রাজখোয়া বলেছিলেন, ‘সরকার এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারেনি। মনে হচ্ছে সরকারের ভেতরে একটা প্রতিযোগিতা চলছে কে এই চুক্তির কৃতিত্ব নেবে তা নিয়ে…আমরা যদি দেখি এই সিদ্ধান্তহীনতা এবং বিভ্রান্তি চলছে, তবে আমরা আর চুক্তি সই করব না। আমরা পুরো বিষয়টিই পরের প্রজন্মের হাতে তুলে দেব, তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’

২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত সরকার, আসাম রাজ্য সরকার ও অরবিন্দ রাজখোয়ার নেতৃত্বাধীন উলফা একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করে। সেই চুক্তিতে বলা হয়েছিল, আলফা এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী পরস্পরকে আক্রমণ করবে না। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত শান্তিচুক্তি সই করা হবে বলে তখন বলা হয়েছিল। কংগ্রেস সরকারের সময়ে চুক্তি সই হলেও পরবর্তী সময়ে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) উলফার সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যায়।

কিন্তু সেই চুক্তি হওয়ার ১১ বছর পরেও চূড়ান্ত শান্তিচুক্তি সই হয়নি। উল্টো চলতি বছরের ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত অন্তত ২৩০ জন অল্প বয়স্ক ছেলেমেয়ে উলফার জঙ্গিগোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন পরে আত্মসমর্পণ করেছে, কেউ কেউ বাড়ি ফিরে এসেছে। কিন্তু অধিকাংশ ছেলমেয়ে ফিরে আসেনি। বিষয়টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য উদ্বেগের বড় কারণ।

এর মধ্যেই স্বাধীনতা দিবসে উত্তর লখিমপুর জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে রেলস্টেশনের আলফার (আই) পতাকা উড়তে দেখা গেল। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে আসাম পুলিশ। আসাম ও উত্তর-পূর্ব ভারতে জঙ্গি তৎপরতা এবং তার গভীরতা যে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা স্বীকার করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।