এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান

সৌদি আরবকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেবেন ট্রাম্প, ইসরায়েল কেন এ নিয়ে উদ্বিগ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল সোমবার বলেছেন, তিনি সৌদি আরবের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রিতে অনুমোদন দেবেন। এর মাধ্যমে আরব দেশগুলোতে ওয়াশিংটনের সংবেদনশীল প্রযুক্তিসম্পন্ন অস্ত্র বিক্রির নীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত মিলছে।

আজ মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।

আগের দিন সোমবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এফ-৩৫ বিক্রি করতে যাচ্ছি। হ্যাঁ, আমি এটি করার পরিকল্পনা করছি। তারা সেগুলো কিনতে চায়। ওরা আমাদের খুব ভালো মিত্র।’

আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের অংশ হিসেবে ট্রাম্প সৌদি আরবকে ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনে রাজি করাতে কাজ করছেন। তাঁর ওই চেষ্টার মধ্যেই সৌদি আরবের কাছে অত্যাধুনিক এ সমরাস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেওয়ার ঘোষণা এল।

এ বক্তব্যের মাধ্যমে ট্রাম্প ওয়াশিংটনের সঙ্গে রিয়াদের সম্পর্ক স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত রিয়াদের জন্য বড় ধরনের সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের অংশ হিসেবে ট্রাম্প সৌদি আরবকে ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনে রাজি করাতে কাজ করছেন। তাঁর ওই চেষ্টার মধ্যেই সৌদি আরবের কাছে অত্যাধুনিক এ সমরাস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেওয়ার ঘোষণা এল।

যদিও সৌদি আরবের কর্মকর্তারা তাঁদের দেশ ‘আরব পিস ইনিশিয়েটিভ’–এর প্রতি নিজের প্রতিশ্রুতিতে অটল থাকার কথা জানিয়েছেন।

আরব পিস ইনিশিয়েটিভে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার শর্ত হিসেবে একটি টেকসই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা আছে।

ওয়াশিংটন ও রিয়াদের মধ্যে সম্ভাব্য এ অস্ত্র বিক্রি চুক্তি ইসরায়েলের সামরিক প্রাধান্য সংরক্ষণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ইসরায়েলকে এ সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলা আছে।

ইসরায়েলের কয়েকজন কর্মকর্তা এরই মধ্যে সৌদি আবরকে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেওয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।

ইসরায়েলের কয়েকজন কর্মকর্তা এরই মধ্যে সৌদি আবরকে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেওয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।

ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের পুরোনো একটি প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ওই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, সামরিক শক্তিতে ইসরায়েলকে তাদের সম্ভাব্য আঞ্চলিক প্রতিপক্ষদের তুলনায় উচ্চতর অবস্থানে রাখার বাধ্যবাধকতা আছে যুক্তরাষ্ট্রের।

১৯৬৮ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম এই নীতি গ্রহণ করে। পরে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান আনুষ্ঠানিকভাবে এ নীতির স্বীকৃতি দেন। চার দশকের বেশি সময় ধরে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি এ নীতিতে পরিচালিত হয়ে আসছে।

তেল আবিবে মহড়ায় ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর একটি এফ-৩৫ লাইটনিং যুদ্ধবিমান। ২৬ এপ্রিল ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি প্রশাসন ইসরায়েলের সামরিক প্রাধান্য সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থেকেছে, যাতে ইসরায়েল সম্ভাব্য যেকোনো আঞ্চলিক জোটের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা ও অ্যারোস্পেস কোম্পানি লকহিড মার্টিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তৈরি করে। এটিকে বিশ্বে সবচেয়ে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান বলা হয়। এটিতে এমন প্রযুক্তি রয়েছে, যা সহজে শত্রুর আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারে। এখন পর্যন্ত যেসব আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলোর দ্বারা এফ-৩৫–কে শনাক্ত করে আকাশেই ধ্বংস করা দেওয়া কঠিন।

ইসরায়েল থেকে সমালোচনাকারীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করে, তবে ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের আঞ্চলিক সামরিক শ্রেষ্ঠত্বে তার প্রভাব পড়বে।

ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা এবং দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক উপপ্রধান ইয়াইর গোলান বলেন, এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে ‘অস্ত্র প্রতিযোগিতা’ শুরুর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ফলে কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল যে সুবিধাজনক অবস্থান ধরে রেখেছে, তা ক্ষুণ্ন করতে পারে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারকে ‘ব্যর্থতাপ্রবণ’ বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন গোলান।

গোলান বলেন, মানসম্পন্ন সামরিক প্রাধান্য, যা বহু দশক ধরে ইসরায়েলের নিরাপত্তার ভিত্তি, তা নষ্ট করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বলেছেন, ইসরায়েলকে এ অঞ্চলে অবশ্যই আকাশে নিজের সামরিক প্রাধান্য বজায় রাখতে হবে।

সোমবার বেন–গভির স্থানীয় একটি পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা মধ্যপ্রাচ্যে আছি। তাই আমাদের বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ সত্যিকারের সহযোগিতার হাত বাড়াতে চায় এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে না চায়, তাদের প্রতি আমরা আমাদের হাত বাড়িয়ে দেই। কিন্তু আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।’

এদিকে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের হোয়াইট হাউসে যাওয়ার ঠিক আগে এফ-৩৫ নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণা রিয়াদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক গভীর করার চেষ্টাকে তুলে ধরছে। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের বিস্তৃত মধ্যপ্রাচ্য নীতির অংশ।

মার্কিন প্রতিরক্ষা ও অ্যারোস্পেস কোম্পানি লকহিড মার্টিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তৈরি করে। এটিকে বিশ্বে সবচেয়ে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান বলা হয়। এটিতে এমন প্রযুক্তি রয়েছে, যা সহজে শত্রুর আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারে। এখন পর্যন্ত যেসব আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলোর দ্বারা এফ-৩৫–কে শনাক্ত করে আকাশেই ধ্বংস করা দেওয়া কঠিন।

ঐতিহাসিকভাবে ওয়াশিংটন ইসরায়েলের সামরিক প্রাধান্য–সংক্রান্ত উদ্বেগ মোকাবিলা করেছে আঞ্চলিক আরব রাষ্ট্রগুলোতে অস্ত্র বিক্রি হ্রাস করে অথবা ইসরায়েলকে উন্নত সংস্করণ এবং অতিরিক্ত সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে।

এখন যদি যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করে, তবে এটাই হবে প্রথম কোনো আরব দেশের সঙ্গে ওয়াশিংটনের এফ-৩৫ বিক্রি–সংক্রান্ত চুক্তি।

এর আগে ২০২০ সালে ট্রাম্প সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির অনুমোদন দিয়েছিলেন। বিনিময়ে আবুধাবি ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনে রাজি হয়েছিল।

ইসরায়েলকে এ অঞ্চলে অবশ্যই আকাশে নিজের সামরিক সক্ষমতাসংক্রান্ত প্রাধান্য বজায় রাখতে হবে।
ইতমার বেন-গভির, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী

কিন্তু ২০২১ সালে ট্রাম্পকে হারিয়ে জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর কংগ্রেসে ওই চুক্তি বাতিল হয়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস দেশটির প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুমোদিত অস্ত্র বিক্রি চুক্তি প্রত্যাখ্যান করতে পারে।