ইরানের হামলায় বিধ্বস্ত ভবনে ইসরায়েলের জরুরী কর্মীদের উদ্ধার তৎপরতা। ১৪ জুন, তেল আবিব
ইরানের হামলায় বিধ্বস্ত ভবনে ইসরায়েলের জরুরী কর্মীদের উদ্ধার তৎপরতা। ১৪ জুন, তেল আবিব

ইসরায়েল কেন এই মুহূর্তে ইরানে হামলা চালাল

ইরানে গত বছর ইসরায়েলের দুই দফা হামলার তুলনায় এবারকার অভিযান শুধু তীব্র ও বিস্তৃতই নয়; বরং এতে লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে গত নভেম্বরে ইসরায়েলের হামলার কিছু কৌশলও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।

ইরানের পাল্টা আঘাতের ক্ষমতা কমাতে শুধু ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতেই নয়, এবার তাদের শীর্ষ নেতাদের ওপরও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইরানের নেতৃত্বে বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি করতে এসব হামলা চালানো হচ্ছে।

লেবাননে ইসরায়েলের এই ‘ডিক্যাপিটেশন স্ট্র্যাটেজি’; অর্থাৎ শীর্ষ নেতাদের টার্গেট করে হত্যার কৌশল হিজবুল্লাহর জন্য ছিল বড় ধাক্কা। এর ফলে সংগঠনটির পক্ষে টেকসই প্রতিরোধ গড়া কঠিন হয়ে পড়ে।

তেহরান থেকে পাওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু ভবনে হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলার ধরন বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর ওপর চালানো ইসরায়েলের আগের হামলার সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ এমন এক হামলায় নিহত হয়েছিলেন।

তবে ইরানে এখনো শীর্ষপর্যায়ের কোনো নেতা নিহত হয়েছেন বলে জানা যায়নি। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে—তারও কোনো প্রমাণ মেলেনি।

ইসরায়েলের এবারের অভিযানের শুরুতেই ইরানের সেনাবাহিনী প্রধান, শক্তিশালী রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং কয়েকজন শীর্ষ পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগে থেকে বলে রেখেছেন, এই অভিযান হয়তো কয়েক দিন পর্যন্ত চলতে পারে। এ ধরনের হামলা ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর এক বিরল ও বড় ধাক্কা।

বলা বাহুল্য, এ হামলার পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের পক্ষ থেকে গত বছরের দুই হামলার তুলনায় অনেক বেশি তীব্র জবাব আসার কথা। অবশ্য ইতিমধ্যে ইরানও পাল্টা হামলা শুরু করেছে।

তবে এই আঘাত তেহরানের শক্তিশালী জবাব দেওয়ার সক্ষমতা অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, উগ্রপন্থী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই সামরিক উত্তেজনা বাড়ানোর আগে এটাই বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ভবনে উদ্ধার কাজ করছেন ইরানি রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা। ১৪ জুন, তেহরান

কেন হামলার পক্ষে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে কথা বলছিলেন, কেন এখন তাঁর সময় এসেছে, এসব প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।

অভিযান শুরুর পর দেওয়া এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, এ হামলা ছিল ইসরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়।

বহু বছর ধরে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করে আসছেন, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারলে ইসরায়েলের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। এই হুমকির তাৎক্ষণিকতা বোঝাতে গিয়ে এক জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা সম্প্রতি জানিয়েছেন, ইরানের কাছে এত পরিমাণ ইউরেনিয়াম আছে যে তারা কয়েক দিনের মধ্যেই অন্তত ১৫টি পারমাণুবিক বোমা তৈরি করতে পারবে।

তবে হামলার পেছনে ভিন্ন আরেকটি কৌশলগত পটভূমিও থাকতে পারে।

তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান আলোচনা রোববার ষষ্ঠ দফায় প্রবেশ করতে যাচ্ছিল। আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে পরস্পরবিরোধী বার্তা আসছিল।

উগ্রবাদী নেতানিয়াহুর কাছে এটি হয়তো এক নির্ধারণী মুহূর্ত বলে মনে হয়েছে। তাঁর দৃষ্টিতে, একেবারে শুরুতেই ‘অগ্রহণযোগ্য’ পরমাণু চুক্তি থামিয়ে দেওয়া সম্ভব।

সামরিকভাবে নেতানিয়াহু ও তাঁর উপদেষ্টারা হয়তো মনে করছেন, ইরান এবং তার আঞ্চলিক মিত্ররা (বিশেষ করে হিজবুল্লাহ) এতটাই দুর্বল হয়েছে যে তারা আর আগের মতো গুরুতর নেই। এ কারণে ইসরায়েলিরা মনে করছেন, এখনই প্রতিপক্ষকে চেপে ধরতে হবে।

এই মুহূর্তে হামলা চালালে তীব্র প্রতিরোধের আশঙ্কাও তুলনামূলক কম।

তবে শিগগিরই প্রমাণ হবে, নেতানিয়াহুর এই হিসাব সঠিক ছিল, নাকি এটি ছিল ভয়ানক এক ভুল।