রাজনীতি ও জাতীয় সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্বের জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলোর বিদ্যমান সংস্কৃতি বদলাতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়টা নারীদের জন্য কিছু করে যাওয়ার একটা সুযোগ বলে মন্তব্য করেছেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক।
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘সংসদে নারী আসন ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে শিরীন পারভীন হক এ কথাগুলো বলেন। এই গোলটেবিলের আয়োজন করেছে প্রথম আলো। গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন। এতে সংসদে নারী আসন নিয়ে ধারণাপত্র তুলে ধরেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজনীন আখতার।
রাজনৈতিক দলের বিদ্যমান সংস্কৃতি মেনে নেওয়া যায় না উল্লেখ করে শিরীন হক বলেন, ‘এটা আমাদের খোলাখুলি সমালোচনা করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি মনে করে, বয়েজ ক্লাব হিসেবে পার করে দেব, তাহলে তো সেটা আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। সেটার জন্য প্রতিবাদ করতে হবে। তাদের (রাজনৈতিক দল) সংস্কৃতি বদলাতে হবে।’
জাতীয় সংসদে নারী আসন প্রসঙ্গে শিরীন পারভীন হক বলেন, ‘আগে যখন ১৫টা সিট দিয়ে শুরু হয়েছিল, তখন জনসংখ্যা কী ছিল, আর এখন জনসংখ্যা কত। গোটা সংসদ দিয়েই তো প্রশ্ন ওঠানো দরকার, ৩০০ মানুষ কী করে এই জনসংখ্যাকে প্রতিনিধিত্ব করে। আমাদের তো জনপ্রতিনিধির সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং সেই সংখ্যা বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে নারীর আসনের বিষয়টা দেখতে হবে।’
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন জাতীয় সংসদে নারীর জন্য ৩০০ আসন সংরক্ষিত রেখে এরপর সেসব আসনে সরাসরি নির্বাচনসহ মোট আসনসংখ্যা ৬০০ করার সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে শিরীন হক বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব দুই টার্মের জন্য। কারণ, আমরা মনে করেছি, এই দুই টার্মে অন্তত অনেক নারী নেতৃত্ব তৈরি হবে এবং এই কথাটা কিন্তু প্রমাণিত হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে।’
প্রস্তাবিত ৬০০ আসনের বিষয়ে শিরীন হক বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সময়টা একটা ঐতিহাসিক সুযোগ অনেক কিছু করার। সে জন্য এ প্রস্তাব। রাজনৈতিক সরকার এলে সেটা থাকবে না। কারণ, রাজনৈতিক দলের মধ্যে কী সংস্কৃতি বিরাজ করছে এবং সমাজেও কী সংস্কৃতি বিরাজ করছে, সেটা জানি।’
শিরীন হক আরও বলেন, ‘আমরা নারীকে যদি সুযোগ না দিই, দরজাটা খুলে যদি না দিই এবং দরজার বাইরে রাখব বলে যদি ঠিক করে বসে থাকি, তাহলে নারী দেখব না। নারীকে দেখার চোখটা বন্ধ রাখলে হবে না।’
বিকেন্দ্রীকরণে আমরা খুব জোর দিয়েছি। কারণ, একমাত্র বিকেন্দ্রীকরণের মধ্য দিয়েই কিন্তু তৃণমূলের নারীরা কেন্দ্রে এসে পৌঁছবেন। নয়তো তাঁরা ওইখানেই থাকবেন—বলেন শিরীন হক।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও অংশ নিয়েছেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, নারীপক্ষের সভানেত্রী গীতা দাস, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য ইলিরা দেওয়ান, জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও শিক্ষার্থী নাজিফা জান্নাত।