Thank you for trying Sticky AMP!!

রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির কাউন্টার। গাবতলী, ঢাকা, ২৯ মার্চ

‘মুঠোফোনে বলল ৮০০ টাকা, কাউন্টারে দাম চাইল ১০০০’

রাজধানীর মিরপুর এলাকায় থাকেন নাহার বেগম। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে খুলনার ফুলতলীর গ্রামের বাড়ি যাবেন আগামী ৮ এপ্রিল। এই তারিখের অগ্রিম টিকিটের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ইগল পরিবহনের বাস কাউন্টারের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করেন তিনি। তখন তাঁকে জানানো হয়, টিকিটের দাম ৮০০ টাকা।

আজ শুক্রবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে গাবতলী বাস টার্মিনালের ইগল পরিবহনের কাউন্টারে যান গৃহিণী নাহার বেগম। কিন্তু কাউন্টার থেকে বলা হয়, টিকিটের দাম এক হাজার টাকা। পরে তিনি কম টাকায় দিগন্ত পরিবহনের বাসের অগ্রিম টিকিট কাটেন।

Also Read: ঈদযাত্রার টিকিটের জন্য ‘যুদ্ধ’ এখন অনলাইনে

আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে গাবতলীতে দিগন্ত পরিবহনের কাউন্টারের সামনে কথা হয় নাহার বেগমের সঙ্গে। ইগল পরিবহনের টিকিটের দাম অতিরিক্ত চাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ওদের কাউন্টারের গিয়ে বললাম, মোবাইলে তো ৮০০ টাকা বললেন, এখন কেন ১০০০ টাকা চাইছেন? কাউন্টারের লোক আমাকে বলল ১০০০ হাজার টাকার কম হবে না। এই টাকায় হলে নেন। না হলে পরে এই টাকায়ও কোনো টিকিট পাবেন না।’

নাহার বেগম আগামী ৮ এপ্রিল যাত্রার জন্য দিগন্ত পরিবহনের বিকেল পাঁচটার একটি বাসের তিনটি টিকিট কেটেছেন। তিনটি টিকিটের জন্য তাঁর কাছ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা রাখা হয়েছে। প্রতিটি টিকিটের দাম পড়েছে ৮০০ টাকা করে।

নাহার বেগম বলেন, সাধারণ সময় এই গন্তব্যে টিকিটের দাম রাখা হয় ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। কিন্তু ঈদযাত্রার জন্য ৮০০ টাকা করে রাখা হয়েছে। বেশি ভাড়া রাখার বিষয়ে কাউন্টারের লোকেরা বলছেন, ঈদে ঢাকার বাইরে থেকে খালি বাস নিয়ে ফিরতে হয়।

Also Read: ঈদযাত্রায় বাসের আগাম টিকিট কিনতে কাউন্টারে ভিড় নেই, বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে

নাহার বেগমের অভিযোগের বিষয়ে গাবতলী টার্মিনালের ঈগল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার সোহেল মিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছে সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নারী টিকিটের জন্য আসেননি। তবে গাবতলীতে আমাদের বাস কোম্পানির আরেকটি টিকিট বিক্রির কাউন্টার আছে। সেখানে কেউ বেশি চেয়ে থাকতে পারেন।’

বেশি ভাড়া নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেন সোহেল মিয়া। তিনি বলেন, ‘গাবতলী থেকে খুলনার দূরত্ব ২৯২ কিলোমিটার। বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়া ৮১৩ টাকা। সেখানে আমরা ৮০০ টাকা করে খুলনার টিকিট বিক্রি করছি।’

আজ সকাল ৯টার দিকে গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে গত কয়েক দিনের তুলনায় যাত্রীদের ভিড় তুলনামূলক বেশি দেখা গেছে।

Also Read: ১২০০ টাকার টিকিট নিল ১৮০০ টাকা

যাত্রীদের কেউ টিকিট কেটে কাউন্টারের পাশে বসে নির্ধারিত সময়ের বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কেউবা টিকিট কিনতে কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

এর মধ্যে কয়েকজনকে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট সংগ্রহের জন্য কাউন্টারে গিয়ে খোঁজ নিতে দেখা গেছে।

গাবতলীতে থাকা বিভিন্ন পরিবহনের প্রতিনিধিরা জানান, কিছু কিছু যাত্রী কাউন্টারে আসছেন, টিকিট কিনছেন। কিন্তু সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম। আগামী ৪ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) বিকেল থেকে রাতের এবং ৮ ও ৯ এপ্রিলের (সোমবার) টিকিটের জন্য যাত্রীরা বেশি খোঁজ করছেন। অন্য দিনগুলোর জন্য তেমন যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।

কুষ্টিয়া-মুজিবনগরগামী চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক শাহজাহান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ৪, ৮ ও ৯ এপ্রিলের ৯০ ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ৫ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি হয়েছে ৭০ ভাগ। আজ সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ১৪টি অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে।

Also Read: গাবতলী টার্মিনাল ফাঁকা, অগ্রিম টিকিটের জন্য ভিড় নেই

শাহজাহান আলী আরও বলেন, এর বাইরে অন্যান্য দিনের বেশির ভাগ টিকিট এখনো অবিক্রীত রয়ে গেছে। ঈদযাত্রার বাস আগামী ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হবে। সে সময় প্রতিদিন ১০টি নন-এসি ও ২টি এসি বাস চলবে।

আজ সকালে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের একটি এসি বাসের টিকিট কেনেন শাহাদত হোসেন। তিনি বলেন, অন্য সময়ে এসি বাসের টিকিটের দাম রাখা হয় ৮০০-৯০০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে এই টিকিট ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে শাহজাহানের ভাষ্য, ‘অন্য সময় আমরাও ছাড় দিয়ে ৮০০ টাকায় টিকিট বিক্রি করি। কিন্তু এখন আমাদের বাসের নির্ধারিত যে ভাড়া, ১ হাজার ২০০ টাকা, সেই টাকাই রাখা হচ্ছে।’

তুলনামূলক ভালো কিছু পরিবহন কোম্পানির বাসের ঈদের অগ্রিম টিকিট শেষ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

গাবতলীতে সোহাগ পরিবহনের পেছনের সারির এক-দুটি আসন ছাড়া সব আগাম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানান টিকিট বিক্রেতা রুবেল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাসের বেশির ভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। হাতে গোনা কিছু টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি হয়েছে।’

আবার কিছু কিছু বাস কোম্পানির বেশির ভাগ আগাম টিকিট এখনো অবিক্রীত রয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এমন একটি বাস কোম্পানি বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরাগামী দিগন্ত পরিবহন। বাসটির গাবতলী কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মোমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ৪ ও ৮ এপ্রিলের অর্ধেকের মতো টিকিট বিক্রি হয়েছে। তবে ৫, ৬ ও ৭ এপ্রিলের একটি টিকিটও এখনো বিক্রি হয়নি।

এমন পরিস্থিতির কারণ কী—জানতে চাইলে মোমিনুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর এমনিতেই এখন গাবতলীতে যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। এ ছাড়া অনলাইনে এখন ঘরে বসেই টিকিট কাটা যায়। তবে তাঁদের অনলাইনে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা নেই। ঈদযাত্রা শুরু হলে টিকিটের চাহিদা বেড়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।