Thank you for trying Sticky AMP!!

‘১২ মাসেই মাছ মারছি নদীত, এলা পানিও নাই মাছও নাই’

তিস্তায় মাছ ধরতে যাচ্ছেন জেলেরা। গতকাল বুধবার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর এলাকায়

‘হামার বাপ-দাদার আমল থাকি এই মাছ ধরার কাজ করি আসতোছি। আগোত নদীত শোগসময় পানি আসছো। ১২ মাসেই মাছ মারছি নদীত, এলা (এখন) পানিও নাই মাছও নাই।’

কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের গোডাউনের হাট এলাকার জেলেপল্লির বাসিন্দা ধরণী কান্ত দাস (৬৬)। স্ত্রী-সন্তানসহ তাঁর পাঁচজনের সংসার চলে মাছ ধরে। কিন্তু তিস্তা নদীতে ঠিকমতো মাছ না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

গতকাল বুধবারের চিত্র তুলে ধরে ধরণী কান্ত বলেন, ‘দুইটা ছইলোক নিয়া নদীর অল্প পানিত মাছ মারিয়া আধা কেজি মাছ পাছি। এই মাছ বিক্রি করি চাউল কিনছি। আগোত মাছ খাওয়া হইতো, বিক্রিও হইতো। এখন সেই দিন নাই। দুইটা ছইল মাছ ধরে। কোনো দিন মাছ পায়, কোনো দিন পায় না। পাইলেও খাওয়া হয় না।’

Also Read: তিস্তা চুক্তির আদৌ কি সম্ভাবনা আছে 

রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও বদরগঞ্জ উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তার বুক জুড়ে একসময় পানি থই থই করত। জেলেরা নদীতে মাছ ধরে দিনরাত ব্যস্ত থাকতেন। সেই খরস্রোতা নদীতে এখন কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরসমান। হেঁটে নদী পার হচ্ছেন মানুষ, পার হয় গরু-মহিষের গাড়ি।

তিস্তা নদী পার হচ্ছে মহিষের গাড়ি

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তা নদীর উজানে ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করায় একসময়ের খরস্রোতা তিস্তায় এখন পানি থাকে না। এখন পানি না থাকায় অধিকাংশ সময় জেলেদের বসে থাকতে হয়। শুধু বর্ষা মৌসুমের পানিতে অল্প কয়েক দিন মাছ ধরতে পারেন বলে জেলেরা জানিয়েছেন।

Also Read: তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেরি হওয়ায় ভাঙন তীব্র হচ্ছে: পাউবো মহাপরিচালক

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীর কিছু অংশে পানি থাকলেও সেখানে মাছের দেখা নেই। জেলেদের মাছ ধরার নৌকা পড়ে আছে নদীর কিনারে। যাঁরা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তাঁরা এখন অলস সময় পার করছেন। জেলেরা বলছেন, তিস্তার ওপর তাঁদের জীবিকা নির্ভর করে। এখন তিস্তা শুকিয়ে গেছে। চারপাশে শুধু বালু আর বালু। যে অল্প অংশে পানি আছে, তাতেও মিলছে না মাছ। এখন দুবেলা খাবারের ব্যবস্থাই হচ্ছে না।

তিস্তা নদীর বেশিরভাগ এলাকায় জেগে উঠেছে চর। যেখানে পানি আছে সেখানেও মাছ পাচ্ছেন না জেলেরা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা

গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দ ইউনিয়নের গোডাউনের হাট এলাকায় জেলেপল্লিতে বসবাস করে ৪০টি পরিবার। সেখানকার বাসিন্দা অমল দাস (৫০) বলেন, ‘গেল বছরেও এই সময় অনেক মাছ মারছি। মাছও ছিল। কিন্তু এবার নদীত এলাও পানি নাই। অল্প মাছ পাইছি। ২০০ টাকা বিক্রি করছি।’

Also Read: আশা জাগাচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা

জেলে মনু দাস, মাধব চন্দ্র দাস, সতীনাথ চন্দ্র, রঞ্জন দাস বিমল চন্দ্র, টেপা চন্দ্রসহ আরও অনেকেই জানালেন, নদীতে পলি পড়তে পড়তে চর হয়েছে। শুকিয়ে গেছে নদী। পানি নেই। শুধু বর্ষাকালে পানি থাকে। তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এখন পেশা পাল্টে দিনমজুরির পেশায় ঝুঁকে পড়েছেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামান মানিক বলেন, রংপুরে নদী, বিল ও মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ১৩ হাজার জেলে। রংপুরে কর্মহীন জেলেদের জন্য বরাদ্দ না থাকায় অর্থসহায়তা প্রদান করা সম্ভব হয় না।