Thank you for trying Sticky AMP!!

নাসিরনগরে হামলার ঘটনায় ২ চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের চার বছরের কারাদণ্ড

নাসিরনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলায় রায় ঘোষণার পর আসামিদের কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় করা এক মামলায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক দুই চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনকে চার বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ পারভেজ এ রায় দেন। নাসিরনগরে হামলার প্রায় সাড়ে ছয় বছর পর এ ঘটনায় কোনো মামলার রায় হলো।

কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান শেখ মো. আবদুল আহাদ, হরিপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান, মোখলেছ মিয়া, মো. মফিজুল হক, খসরু মিয়া, নাজির রহমান, মো. মাহফুজ মিয়া, ইদু মিয়া, সায়হাম রাব্বি শ্যাম, মীর কাশেম, আনিছ মিয়া, তাবারক রেজা ও সজিব চৌধুরী। রায় ঘোষণার সময় ১৩ আসামির মধ্যে আটজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাজী দিদারুল আলম বলেন, রায়ের সময় আদালতের এজলাসে আট আসামি উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।

মন্দিরে হামলার সেই দুই আসামির মনোনয়ন বাতিল
নাসিরনগরে হামলায় আ. লীগ, বিএনপি, জনপ্রতিনিধি - সবাই জড়িত!

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর রাতে নাসিরনগর উপজেলা সদরের পশ্চিমপাড়ায় পুরাতন দুর্গামন্দিরে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এতে মন্দিরের অধিকাংশ জিনিস পুড়ে যায়। একই সময় উপজেলার ঠাকুরপাড়ার কেশব চক্রবর্তীর বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে নাসিরনগর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) সাধন কান্তি চৌধুরী পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কেউ মামলা দিতে রাজি না হলে ওই বছরের ৬ নভেম্বর এসআই সাধন কান্তি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

দীর্ঘ পাঁচ বছর তদন্তের পর ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঘটনার ছয় বছর পর আজ রায় দিলেন আদালত।

মামলায় ১৩ আসামির মধ্যে রিকশাচালক ইদু মিয়া ও নাজির রহমানেরও সাজা হয়েছে। রায়ের পর আদালত চত্বরে আসামির স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন

রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি মোস্তাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আদালতের এই রায়ের মাধ্যমে সনাতন সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘর পোড়ানোর ঘটনার ন্যায়বিচার হয়েছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী কামরুজ্জামান মামুন বলেন, ‘কোনো সাক্ষী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ঘটনাস্থলে দেখতে পাননি। বাদী নিজেও ঘটনাস্থলে কোনো আসামিকে দেখেননি। আমরা বারবার আদালতকে বলেছি, সাজা দিতে হলে ন্যূনতম সাক্ষী প্রয়োজন। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা দ্রুত উচ্চ আদালতে আপিল করব।’

Also Read: নাসিরনগরে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিল কে

Also Read: নাসিরনগরে হামলা ঠেকাতে বুক পেতে দেন যাঁরা

থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রসরাজ দাস নামের এক যুবকের ফেসবুকের পোস্টের জেরে ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের’ উপজেলা শাখার নেতারা নাসিরনগর কলেজ মোড়ে বিক্ষোভের ডাক দেন। অন্যদিকে ‘খাঁটি আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের’ নেতারাও নাসিরনগর খেলার মাঠে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেন। পৃথক সমাবেশ চলাকালে উপজেলা সদরে ১৫টি মন্দির ও সনাতন সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় সাতটি মামলা হয়। আর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে রসরাজের নামে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে একটি মামলা করে পুলিশ। আট মামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষকে আসামি করা হয়। আটটি মামলার মধ্যে একটিতে ঘটনার ১৩ মাস পর অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বাকি সাতটি মামলার অভিযোগপত্র ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারির মধ্যে জমা দেওয়া হয়।

৮ মামলায় অভিযোগপত্র জমা, বিচার শুরু হয়নি
নাসিরনগরে তাণ্ডব: ৭ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি ৪ বছরেও

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটটি মামলায় এখন পর্যন্ত ২৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলাটি বাদে বাকি সাতটি মামলায় ৩৯ জন ১৬১ ধারায় পুলিশের কাছে এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় দুজন, দত্তবাড়ির মন্দিরে হামলার মামলায় চারজন, গৌর মন্দিরে হামলার মামলায় চারজনসহ মোট ১০ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।