দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রথমবারের মতো ২ লাখ ৫০ হাজারের সীমা পেরিয়েছে
দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রথমবারের মতো ২ লাখ ৫০ হাজারের সীমা পেরিয়েছে

দক্ষিণ কোরিয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যায় রেকর্ড, মানবিক–সামাজিক বিজ্ঞানে পড়ছেন বেশি

দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা এ বছর প্রথমবারের মতো ২ লাখ ৫০ হাজারের সীমা পেরিয়েছে। গত রোববার দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত সাম্প্রতিক তথ্য থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০২৫ সালের এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৪০০। গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা বেড়েছে ২১ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২৪ সালে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯ হাজার। এই অগ্রগতি সরকারের ‘স্টাডি কোরিয়া ৩০০কে’ কর্মসূচিরই অংশ, যার লক্ষ্য ২০২৭ সালের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন লাখে উন্নীত করা এবং বিশ্বের শীর্ষ ১০টি বিদেশে পড়াশোনার গন্তব্যের মধ্যে জায়গা করে নেওয়া।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই বছর বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির লক্ষ্যমাত্রা আমরা এরই মধ্যে ছাড়িয়ে গেছি। ২০২৭ সালের মধ্যে তিন লাখ শিক্ষার্থী আনার লক্ষ্য এখন হাতের নাগালেই।’

কোন বিষয়ে পড়ছেন বেশি

মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ ৭৯ হাজার ডিগ্রিমুখী কোর্সে ভর্তি, যা মোট সংখ্যার ৭০ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২৪ সালের তুলনায় এ সংখ্যা বেড়েছে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ। মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানে ভর্তি শিক্ষার্থী বেশি হলেও এর হার সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশে। অন্যদিকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (STEM) বিষয়ে ভর্তি শিক্ষার্থীর হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশে, যা গত বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।

কোন দেশের শিক্ষার্থী বেশি

শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীন থেকেই সবচেয়ে বেশি, ৩০ দশমিক ২ শতাংশ। এরপর ভিয়েতনাম ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ, উজবেকিস্তান ৬ দশমিক ২ শতাংশ ও মঙ্গোলিয়া ৬ শতাংশ।

রাজধানীর বাইরে বিস্তার

বিদেশি শিক্ষার্থীরা শুধু সিউলকেন্দ্রিক আর থাকেননি। রাজধানীর বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৩, যা মোট শিক্ষার্থীর ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় এ সংখ্যা বেড়েছে ২৬ দশমিক ১ শতাংশ। উত্তর চুংচং প্রদেশে বিদেশি শিক্ষার্থী প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৩৭। উত্তর গিয়ংসাং প্রদেশে এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৬ হাজার ১০৯, যা ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।

সরকারি উদ্যোগ

এই প্রবৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে রাষ্ট্রীয় ‘রাইজ’ কর্মসূচি, যা স্থানীয় সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করে বিশেষ বৃত্তি ও শিক্ষার্থী আকর্ষণের কৌশল তৈরি করছে। একই সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২২টি দেশে স্থাপিত কোরিয়ান এডুকেশন সেন্টারের মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থী সংগ্রহের কাজ জোরদার করেছে। ভিয়েতনাম, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তানসহ ৯টি প্রধান দেশে শিক্ষা মেলা, বিশ্ববিদ্যালয় পার্টনারশিপ ও পরামর্শ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নিতে সহায়তা করতে সরকার কোরিয়ান ভাষার কোর্স সম্প্রসারণ করেছে এবং সারা দেশে অনুমোদিত কোরিয়ান ভাষাকেন্দ্র গড়ে তুলেছে। আগামী বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ভাষাজ্ঞান যাচাইয়ের মানদণ্ডও আরও কঠোর করা হবে—বর্তমানে যেখানে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক, তা বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হবে।

নতুন ভিসা নীতি

নতুন আঞ্চলিক ভিসা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন শহর তাদের নিজস্ব শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী ছাত্র ভিসা (D–2) নীতিমালা সাজাতে পারবে। যেমন বুসান শহরে সেমিকন্ডাক্টর ও বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি বিষয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা সেমিস্টারজুড়ে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাবেন। গওয়াংজু শহরে এআই ও ভবিষ্যৎ পরিবহন প্রযুক্তিতে পড়াশোনার ক্ষেত্রে আর্থিক শর্ত কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। ডি–টু (D–2) ভিসা হলো দক্ষিণ কোরিয়ার ছাত্র ভিসা, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ডিগ্রিমুখী পড়াশোনার সুযোগ দেয়।

বাড়ছে বৃত্তি ও চাকরির সুযোগ

সরকার STEM খাতের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বৃত্তি দিচ্ছে। একই সঙ্গে বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্থানীয় শিল্পের সঙ্গে যুক্ত করতে ‘কে–ওয়ার্ক’ কর্মসংস্থান প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চাকরি মেলাও আয়োজন করছে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী চোই ইউন–ওক বলেন, ‘আমরা বিদেশি শিক্ষার্থীদের যেন কোরিয়ান সমাজে স্থিতিশীলভাবে বসতি গড়তে পারে, সে জন্য মানসম্পন্ন সহায়তা ও তদারকি চালিয়ে যাব।’ তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ ও পড়াশোনার পর ক্যারিয়ার সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রেও এরই মধ্যে অগ্রগতি হয়েছে।

তথ্যসূত্র: কোরিয়া হেরাল্ড