চোখের সুস্থতায় খাবার ও সুন্নাহভিত্তিক অভ্যাস

ইসলামের আলোকে দৃষ্টিশক্তি সংরক্ষণের বাস্তব দিকনির্দেশনা

চোখ আল্লাহর দেওয়া অমূল্য নিয়ামত। এর মাধ্যমে মানুষ শুধু দুনিয়া দেখে না; বরং কোরআনের নিদর্শন, প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্য উপলব্ধি করে।

ইসলাম দৃষ্টিশক্তিকে শুধু শারীরিক সক্ষমতা হিসেবে দেখেনি; বরং এটিকে নৈতিক দায়িত্ব ও আমানত হিসেবে গণ্য করেছে। তাই চোখের সুস্থতা রক্ষা করা একজন মুমিনের ধর্মীয় দায়িত্বের অংশ।

চোখের সুস্থতা বিষয়ে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি

আল্লাহ বলেন, “তিনি তোমাদের কান, চোখ ও অন্তর সৃষ্টি করেছেন—যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।” (সুরা নাহল, আয়াত: ৭৮)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, চোখের সুস্থতা রক্ষা করা কৃতজ্ঞতার বাস্তব রূপ।

চোখের সুস্থতায় উপকারী খাবার

সুন্নাহ ও ইসলামি ঐতিহ্যের আলোকে চোখ সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত কিছু খাবারের অভ্যাস করার যেতে পারে।

খেজুর

খেজুর রাসুল (স.)-এর অত্যন্ত প্রিয় খাদ্য ছিল। এতে প্রাকৃতিক শর্করা, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা চোখের কোষকে সক্রিয় রাখে।

ইবন কাইয়িম (রহ.) বলেন, “খেজুর চোখের দুর্বলতা দূর করে এবং দৃষ্টিকে শক্তিশালী করে।” (আত-তিব্বুন নববি, পৃষ্ঠা ২৫৮, দারুল হাদিস, কায়রো, ২০০৪)

মধু

মধু কোরআনে ‘শিফা’ হিসেবে উল্লেখিত। এটি শরীরের পাশাপাশি চোখের জন্যও উপকারী। আল্লাহ বলেন, “এর মধ্যে মানুষের জন্য আরোগ্য রয়েছে।” (সুরা নাহল, আয়াত: ৬৯)

প্রাচীন মুসলিম চিকিৎসকরা চোখের দুর্বলতায় মধু ব্যবহারের পরামর্শ দিতেন। এমনকি চোখ ওঠা কিংবা চোখ ব্যথা হলে মধুর ব্যবহার করলে উপশম পাওয়া যায়।

দুধ

রাসুল (স.) দুধকে ফিতরতি খাদ্য হিসেবে পছন্দ করতেন। এতে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন এ রয়েছে, যা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে এসেছে, রাসুল (স.) দুধ পান করে আল্লাহর প্রশংসা করতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০৫২)

যব (বার্লি)

যব দিয়ে তৈরি খাবার রাসুল (স.)-এর খাদ্যতালিকায় ছিল। যব চোখ ও স্নায়ুর জন্য উপকারী বলে প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্রে উল্লেখ আছে। ইমাম জাহাবি লিখেছেন, “যব শরীর ঠান্ডা রাখে এবং চোখের ক্লান্তি কমায়।” (আত-তিব্বুন নববি, পৃষ্ঠা ১৪১, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ১৯৯৬)

চোখের সুস্থতায় সুন্নাহভিত্তিক অভ্যাস

দৃষ্টি সংযত রাখা

আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, “মুমিনদের বলো, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে।” (সুরা নুর, আয়াত: ৩০)

আলেমদের মতে, হারাম বা পাপের দৃষ্টি শুধু ইমান নয়, চোখের নুরও কমিয়ে দেয়।

ঘুমের আগে চোখ বন্ধ করে দোয়া করা

রাসুল (স.) ঘুমের আগে নিজের শরীরে দোয়া পড়ে ফুঁ দিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০১৭)

এটি মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি চোখের ক্লান্তি কমায়।

পর্যাপ্ত ঘুম

রাসুল (স.) ইশার পর অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা অপছন্দ করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৮)

এ থেকে বোঝা যায়—পর্যাপ্ত ঘুম সুন্নাহসম্মত অভ্যাস, যা চোখের জন্য অপরিহার্য

চোখে অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া

ইসলাম সর্বাবস্থায় মধ্যপন্থা শিক্ষা দেয়। দীর্ঘসময় পড়া, মোবাইল বা স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকা—এগুলো চোখের ক্ষতি করে।

ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, “দেহের উপর অতিরিক্ত চাপ আত্মিক ক্ষতিরও কারণ হয়।” (ইহইয়া উলুমিদ্দিন, ৩/৯১, দারুল মারিফাহ, বৈরুত, ২০০২)

কৃতজ্ঞতা ও দোয়া

নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করলে তা বৃদ্ধি পায়। (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৭)

চোখের জন্য নিয়মিত দোয়া করা—এটি সুন্নাহ ও বাস্তব উভয় দিক থেকেই উপকারী।

আধুনিক বাস্তবতায় প্রয়োগ

আজকের যুগে চোখের দুর্বলতার বড় কারণ হলো:

  • দীর্ঘ স্ক্রিন টাইম

  • ঘুমের অভাব

  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

  • মানসিক চাপ

সুন্নাহভিত্তিক জীবনধারা এসব ঝুঁকি কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

চোখের সুস্থতা শুধু চিকিৎসার বিষয় নয়; এটি ইমান, আমল ও জীবনাচরণের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।

ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে, হালাল ও পবিত্র খাবার গ্রহণ, সুন্নাহসম্মত অভ্যাস গড়ে তোলা, দৃষ্টি সংযত রাখা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা—এই চারটি বিষয় একত্র হলে চোখের সুস্থতা রক্ষা পায়। একজন মুমিন যদি এ পথ অবলম্বন করে, তবে সে শুধু দৃষ্টিশক্তিই নয়, অন্তরের নুরও সংরক্ষণ করতে পারবে।