টাইব্রেকারের শেষ শটে মোহামেডানের কামরুল গোল করতেই দাড়ি পড়ল রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে। যে ফাইনালের জন্য মোহামেডান অপেক্ষা করছিল ১৪ বছর। অপেক্ষার অবসানের রঙিন সন্ধ্যায় ব্যক্তিগত তিনটি পুরস্কারই উঠল একজনের হাতে—সোলেমান দিয়াবাতে। ফেডারেশন কাপের সেরা খেলোয়াড়, ফাইনাল–সেরা, সর্বোচ্চ গোলদাতা—আর কী চাইতে পারতেন মোহামেডানের মালির স্ট্রাইকার!
Also Read: এমন ফাইনাল কবে দেখেছে বাংলাদেশের ফুটবল
ম্যাচ শেষে ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমে কোনোমতে তাঁকে ধরা গেল প্রতিক্রিয়ার জন্য। হাতে দুটি ট্রফি আর একটি ক্রেস্ট। ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ক্রেস্ট। সব পাওয়ার সন্ধ্যায় দিয়াবাতের কথা বলার অবস্থা নেই। ড্রেসিংরুমের ভেতর মোহামেডান খেলোয়াড়দের হইহুল্লোড়ের মধ্যে বোঝাই যাচ্ছিল না তাঁর কথা।
তবু যতটুকু বোঝা গেল, তা এমন, ‘আমি আমার মা ও পরিবারকে এসব পুরস্কার উৎসর্গ করছি। মা মালিতে থাকেন। এই মুহূর্তে তাঁকে খুব মনে পড়ছে। মনে পড়ছে আমার গোটা পরিবারকে। আমি ভীষণ আনন্দিত। তবে এই কৃতিত্ব আমার একার নয়। গোটা দল আমাকে সহায়তা করেছে। আমি গোলের সুযোগ কাজে লাগিয়েছি। আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।’ দিয়াবাতে পরে বলেছেন, তাঁর এই সাফল্য তিনি উৎসর্গ করছেন সমর্থকদেরও।
২-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও মোহামেডান একটা সময়ে ২-২ করেছে। আবাহনী ৩-২ করে এগিয়ে যায় আবার। নির্ধারিত সময়ের খেলা ৩-৩–এ শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়ে মোহামেডান এগিয়ে যায় ৪-৩–এ। শেষক্ষণে ৪-৪ করে ম্যাচ টাইব্রেকারে নেয় আবাহনী।
ফাইনাল ম্যাচটা যে এমন নাটকীয় হয়ে উঠবে, সেটা কি ভেবেছিলেন দিয়াবাতে? দিয়াবাতে ধীরস্থির, ‘নিজের ওপর আমার বিশ্বাস ছিল। তা ছাড়া ফুটবলে যেকোনো কিছু হতে পারে। আমার পরিবার সারাক্ষণ আমার জন্য প্রার্থনা করে। আমি গতকালই বলেছিলাম, মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন করতে সেরাটা দেব। সেটা পেরেছি।’ ক্যারিয়ারে এই প্রথম কোনো ফাইনালে ৪ গোল কি না, জানতে চাইলে মোহামেডারের নাম্বার টেন বলেন, ‘হ্যাঁ, এটাই প্রথম।’
মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদও স্বাভাবিকভাবেই দারুণ খুশি। কোচ হিসেবে মোহামেডানকে এই প্রথম কোনো ট্রফি এনে দিলেন। আর সাফল্য মোহামেডানকে বদলে দেবে বলে বিশ্বাস সাদা–কালো কোচের, ‘ফেডারেশন কাপে আমার দেখা এ রকম একটা ম্যাচ হয়েছে অনেক আগে। তবে আজকের ম্যাচটিকেই এগিয়ে রাখব। মোহামেডান নয়, আজ আসলে ফুটবলেরই জয় হয়েছে। দিনটা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ফেডারেশন কাপে ফুটবলার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, এখন কোচ হয়ে চ্যাম্পিয়ন হলাম। এর চেয়ে আনন্দের কিছু নেই।’
২ গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় বিরতির সময় দলকে কী মন্ত্র দিয়েছিলেন, আলফাজ জানালেন সেটাও, ‘আমি খেলোয়াড়দের বলেছি, ঠান্ডা মাথায় খেল। তিনজন খেলায়াড় বদল করেছি, ফরমেশন বদল করেছি। ফুটবলাররা আমার পরিকল্পনামতো খেলে সফল হয়েছে।’
Also Read: ছবির গল্পে মোহামেডানের অবিশ্বাস্য জয়
মোহামেডানের একঝাঁক সাবেক তারকা কুমিল্লায় এসেছেন ম্যাচ দেখতে। ম্যাচ শেষে তাঁরাও তৃপ্ত। সাবেক ফুটবলার সৈয়দ রুম্মান বিন ওয়ালী সাব্বির বললেন, ‘অনেক বছর পর একটা ফাইনালের মতো ফাইনাল দেখলাম। এ রকম মোহামেডান-আবাহনী ফাইনাল আমি দেখিনি। এর চেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ হয়তো হয়েছে, কিন্তু এই ফাইনালটা অন্য রকম। ৮টি গোল দেখলাম। মোহামেডানের একটা শিরোপা দরকার ছিল। সেটা আমরা পেয়েছি। মোহামেডান সমর্থক এবং গোটা দলের জন্য এটা দরকার ছিল ভীষণ।’
আরেক সাবেক ইমতিয়াজ সুলতান জনির কথা, ‘আবাহনী-মোহামেডান ফাইনাল হচ্ছে নিশ্চিত হওয়ার পর যে সাড়া দেখেছি, তাতে আশাবাদী ছিলাম যে দারুণ কিছু হবে। মোহামেডান যে পারে, সেটা আজ দেখিয়েছে।’ একই রকম অনুভূতি জসিম উদ্দীন জোসিরও।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রথম শিরোপাশূন্য একটা মৌসুম কাটাল আবাহনী। কোচ মারিও লেমোসের জন্য খুবই হতাশার এই ব্যর্থতা। আজ ফেডারেশন কাপ ফাইনালে এগিয়ে গিয়েও জিততে না পারায় কোচ রীতিমতো ক্ষুব্ধ, ‘২-০ গোলে এগিয়ে থেকেও জিততে না পারাটা হতাশার। আমরা দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১৫ মিনিট খুবই বাজে ফুটবল খেলেছি। ম্যাচে ফিরে আসতে ওদের আমরাই জায়গা করে দিয়েছি। আমি মনে করি, ট্রফি পাওয়া উচিত ছিল আমাদের। প্রথমার্ধে আমরা ভালো খেলেছি।’
দিয়াবাতে যে একাই ম্যাচটা নিজেদের করে নিয়েছেন, আবাহনী কোচ মানলেন সেটাও, ‘ও দারুণ খেলেছে। আমরা ওকে সুযোগ দিয়েছি গোল করার। আমাদের ভুল ছিল অনেক।’
শেষ দিকে হাতে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন মোহামেডানের গোলকিপার সুজন হোসেন। মোহামেডান কোচের পরিকল্পনা ছিল দ্বিতীয় গোলকিপার আহসান হাবিবকে (বিপু) টাইব্রেকারে নামাবেন এবং সেটাই করেছেন। আবাহনীর দুটি শট আটকে মোহামেডানের জয়ে বড় অবদান আহসানের। তাঁকে প্রশংসায় ভাসিয়ে সুজন ড্রেসিংরুমের প্রচণ্ড কোলাহলের মধ্যেই বললেন, ‘আল্লাহার কাছে আমরা অশেষ শুকরিয়া প্রকাশ করছি। দারুণ খেলেছে বিপু। আসলে আমরা গোটা দলই আজ দারুণ খেলেছি।’
আরও পড়ুন
-
আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আগেই জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
-
রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে যেভাবে দেশ ছেড়েছিলেন আজিজ আহমেদের ভাই জোসেফ
-
আজিজ আহমেদের ভাই সন্ত্রাসী জোসেফের সাজা মওকুফ করতে যেভাবে তোড়জোড় হয়েছিল
-
নেতানিয়াহুর অপরাধ দেখেন না বাইডেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির চেষ্টায় ক্ষুব্ধ
-
এক চাকরিজীবনে বহু অনিয়মের সঙ্গী