অনেকের চোখেই লিওনেল মেসিই সর্বকালের সেরা ফুটবলার। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের আর কী পাওয়ার আছে, সেই প্রশ্ন আপনি করতেই পারেন। তবে আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর মনে করেন, তাঁর সামনে এখনো করার মতো অনেক কিছুই বাকি।
ইন্টার মায়ামিতে খেলা এই মহাতারকা বুধবার এক বিজনেস ফোরাম বা ব্যবসায়িক সম্মেলনে বলেন, ফুটবলজীবনে কী কী করেছেন, তা ফিরে দেখার সময় একদিন হবে তাঁর। তবে অবসরের আগে ফুটবলের নিজের অবদান ও অর্জন নিয়ে না ভাবার কথাও বলেছেন মেসি। সেই সময়টা যে ২০২৮ সালের আগে নয়, সেটি তো জানাই। ইন্টার মায়ামির সঙ্গে তাঁর নতুন চুক্তিটা তো ২০২৮ পর্যন্তই।
এখন আমার খেলা উপভোগ করা এবং খেলে যাওয়ার সময়।লিওনেল মেসি, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক
মায়ামির এই ব্যবসায়িক সম্মেলনে শহরটির মেয়র মেসির হাতে শহরের প্রতীকী চাবি তুলে দেন। সেখানে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ফুটবলে তিনি কী দিয়ে যাচ্ছেন। স্প্যানিশ ভাষায় মেসির উত্তর, ‘এটা নিয়ে আমি এখনো ভাবিনি বা চিন্তিতও হইনি। একটা সময় তো অবসর নেবই। তখনই ক্যারিয়ারে যা করেছি, পেশাগত জীবনে যা অর্জন করেছি, সেসব আরও বেশি করে উপলব্ধি করতে পারব। কিন্তু এখন আমার খেলা উপভোগ করা এবং খেলে যাওয়ার সময়।’
রেকর্ড আটবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী মেসি ছিলেন আমেরিকা বিজনেস সামিটের প্রথম দিনের শেষ বক্তা। যেখানে তাঁর আগে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো এবং ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো।
মায়ামির মেয়র ফ্রান্সিস সুয়ারেজ মেসির সাক্ষাৎকার নেন। কথাবার্তা শেষে তিনি মেসিকে শহরের আনুষ্ঠানিক ‘কি’ বা প্রতীকী চাবি তুলে দেন। ব্যবসায়ী-করপোরেট অতিথিতে ভরা মিলনায়তনে মেসিকে বিপুল করতালিতে অভিবাদন জানানো হয়। মেসি যখন কথা বলছিলেন, অনেকে মুঠোফোনে ছবি তোলা ও ভিডিও করতে থাকেন।
মায়ামিকে নিয়ে মুগ্ধ মেসি তাঁকে আন্তরিকভাবে বরণ করে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন শহরবাসীকে, ‘দারুণ, এই অসাধারণ শহরে প্রথম দিন থেকেই আমার জন্য মানুষের ভালোবাসা ছিল চোখে পড়ার মতো। আর আজকেও আমাকে যেভাবে স্বাগত জানানো হলো...আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ।’
একজন খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ জেতা—আমার মনে হয় এর চেয়ে বড় কিছু নেই। বিশ্বকাপ জিতে গেলে আর কিছু চাওয়ার থাকে না।লিওনেল মেসি, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক
২০২২ সালে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানোর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল—এ প্রশ্নও করেন মায়ামির মেয়র সুয়ারেজ। মেসির উত্তর, ‘একজন খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ জেতা—আমার মনে হয় এর চেয়ে বড় কিছু নেই। বিশ্বকাপ জিতে গেলে আর কিছু চাওয়ার থাকে না।’
২০২৩ সালের মাঝামাঝি ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেন মেসি। গত মৌসুমে জেতেন মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) এমভিপি বা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। এবারও তিনি এমভিপি জয়ের প্রধান দাবিদার। শনিবার ফোর্ট লডারডেলে ন্যাশভিল এসসির বিরুদ্ধে প্রথম রাউন্ডের প্লে-অফের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে নামবে ইন্টার মায়ামি। ম্যাচটি মেসিদের জন্য বাঁচা–মরার।
৩৮ বছর বয়সেও দাপুটে মেসি এবারের এমএলএস লিগ পর্বে করেছেন সর্বোচ্চ ২৯ গোল। করেছেন ১৯টি অ্যাসিস্টও। মোট ৪৮টি গোলে অবদান তাঁর, যা ২০১৯ সালে কার্লোস ভেলার ৪৯ গোল-অবদানের রেকর্ড থেকে মাত্র একটিই কম।
তবে ব্যবসায়িক সম্মেলনে মেসি এটাও স্বীকার করেন, ধীরে ধীরে তাঁর মন ফুটবল-পরবর্তী জীবনের দিকেও সরে যাচ্ছে। নানা ব্যবসায়িক আগ্রহ রয়েছে তাঁর। মেসি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে, একসময় তো সবকিছুই শেষ হয়। আমি শিখতে চাই। আমার জন্য নতুন কিছু আসছে, অন্য এক দুনিয়া। ধীরে ধীরে সেদিকে জড়িয়ে পড়ছি।’
এই দিনই ইন্টার মায়ামি জানায়, মায়ামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে তাদের নতুন স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ বড় এক মাইলফলক পেরিয়েছে। স্টেডিয়ামের ছাউনি বসানোর শেষ বিম স্থাপন করা হয়েছে। নতুন স্টেডিয়ামে খেলতে যেন তর সইছে না মেসির, ‘স্টেডিয়ামটা কবে শেষ হবে, কবে সেখানে খেলতে পারব—আমার তর সইছে না।’