
২০২১ সালে প্রথম জাতীয় সাঁতারে অংশ নিয়ে জিতেছিলেন মাত্র একটি ব্রোঞ্জ। পাঁচ বছর না যেতেই সেই সামিউল ইসলামের শোকেসে ২৪টি জাতীয় স্বর্ণপদক। এবারের ৩৪তম জাতীয় সাঁতারে গতকাল পর্যন্ত ৯টি ইভেন্টে অংশ নিয়ে সব কটিতেই সোনা জিতেছেন নৌবাহিনীর এই সাঁতারু, যার সাতটিতেই করেছেন নতুন রেকর্ড। আজ শেষ দিনের দুটি ইভেন্টেও সোনা জেতারই লক্ষ্য। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া সামিউল গতকাল প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন তাঁর সাফল্যের নেপথ্যের কথা—
এখন পর্যন্ত ৯টি ইভেন্টে অংশ নিয়ে ৯টিতেই সোনা জিতলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?
সামিউল: ইচ্ছা ছিল এবার ব্যতিক্রম কিছু করা দেখানোর, সেটাই করছি। আগে কেবল দুই–তিনটি ইভেন্টে ফোকাস করতাম। এবার ১১ ইভেন্টেই সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে অনুশীলন করি। চেষ্টা করেছি নিজের টাইমিংয়ে উন্নতি আনার, সেটার ফলই পাচ্ছি। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করলেই আমার এ অর্জন সার্থক হবে।
শেষ দিনে আরও দুই ইভেন্টে অংশ নেবেন। সেগুলোতে কী আশা করছেন?
সামিউল: অবশ্যই প্রথম হওয়ার জন্য লড়ব। শরীর যদি সুস্থ থাকে, কোনো চোটে না পড়লে আশা করি, বাকি দুটিও জিতব।
আপনি পুলে নামলেই রেকর্ড হচ্ছে। এই সাফল্যকে কীভাবে দেখেন?
সামিউল: আমি নিজেই এখন নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। আজ যে টাইমিং করলাম, কাল তার চেয়ে একটু উন্নতি করলেই আমি খুশি। এটাই এখন আমার আসল চ্যালেঞ্জ।
এত রেকর্ড, এত পদক! এটাই কি আপনার ক্যারিয়ারের সেরা সময়?
সামিউল: এখন পর্যন্ত এটাই সেরা। কয়েক দিন আগে এশিয়ান সাঁতার প্রতিযোগিতায় ভারতের একজন ২৫.৭০ সেকেন্ড সময় নিয়ে রুপা জিতেছিলেন। জাতীয় সাঁতারে এবার আমি ২৫.৯০ সেকেন্ড টাইমিং করেছি। ২৫ সেকেন্ডের ঘরে ঢোকাটা আমার জন্য বড় অর্জন। এটা ধরে রেখে আরেকটু এগিয়ে যেতে পারলে শুধু দক্ষিণ এশিয়া কেন, এশিয়ান পর্যায়েও ভালো করা সম্ভব।
অনেকে দেশে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করতে পারেন না। এটা কেন হয়?
সামিউল: অভিজ্ঞতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আবার এখানে যে টাইমিং হয়, সেটা হয়তো পুরোপুরি সঠিক নয়। এখানে হ্যান্ডটাইমিংয়ে হিসাব হচ্ছে, কিন্তু বিদেশে ইলেকট্রনিক টাইমিং। কেউ কেউ মানসিকভাবেও চাপে পড়ে যায়।
আপনার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কী রকম?
সামিউল: আমি এখন বিদেশেও ভালো করছি। একসময় দেশে যে টাইমিং করতাম, বিদেশে তার চেয়ে খারাপ হতো। এখন সেটা নেই। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের প্রতিযোগিতাগুলোতে আমি প্রথম হচ্ছি। এটাই প্রাপ্তির জায়গা।
জাতীয় সাঁতারে যে টাইমিং হচ্ছে, তা দিয়ে এসএ গেমস, ইসলামিক সলিডারিটি বা এশিয়ান গেমসে পদক পাওয়া কতটা সম্ভব?
সামিউল: এবার যে টাইমিং হচ্ছে, সেটা গেমসগুলোতে পদক জেতার প্রায় সমান। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধান আছে। চেষ্টা করব সেটাও ঠিক করে ফেলতে।
জাতীয় সাঁতারে প্রথমবার অংশ নিয়ে আপনার অর্জন ছিল একটি মাত্র ব্রোঞ্জ। আর এখন শোকেসে শুধু স্বর্ণপদকই ২৪টি। এই সাফল্যের পেছনে কী কাজ করেছে?
সামিউল: নৌবাহিনী আমার এই অগ্রগতির অংশীদার। তাদের অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয়। ২০১৬ সালে প্রতিভা অন্বেষণ দিয়ে আমার সাঁতারে আসা। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে যখন ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ে যাই, তখন নৌবাহিনীর মোস্তাফিজুর রহমান স্যার আমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেন। ওটাই আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট।
বাদ পড়ার পর কি ভেবেছিলেন, এভাবে ফিরে আসতে পারবেন?
সামিউল: বাদ পড়ার পর অনেক ভেঙে পড়ি। একবার ভেবেছিলাম, সাঁতারই ছেড়ে দেব। তখন অন্য কিছু করার উপায়ও ছিল না। আমার বাড়ি রাজবাড়ীতে, সেখানে সাঁতারের অনুশীলনের তেমন সুযোগ–সুবিধা নেই, ক্লাবও নেই। ঢাকায় একটি আন্তস্কুল প্রতিযোগিতায় ভালো করে সেখান থেকে আবার জাতীয় দলের ক্যাম্পে ফিরি। সেটা ছিল আমার কাছে নতুন জীবন পাওয়ার মতো।
থাইল্যান্ডে উন্নত প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, বাংলাদেশেও ক্যাম্প করেছেন। দুই দেশের সুযোগ-সুবিধার মধ্যে পার্থক্য কেমন?
সামিউল: দেশে এখনকার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। খাবারের মানও ভালো হচ্ছে। যদিও আমাদের আরও প্রোটিন ও আমিষসমৃদ্ধ খাবার দরকার। থাইল্যান্ডে একজন পুষ্টিবিদও পেয়েছি, যিনি সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী চার্ট করে দিতেন। এখানে সেই সুবিধাগুলো পাই না। তবু নতুন কোচ আসার পর অনেক কিছুর উন্নতি হয়েছে।