
মাদাগাস্কারের সরকার ভেঙে দেওয়ায় কেবল সন্তুষ্ট নন মাদাগাস্কারের তরুণ বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার পদত্যাগ চান। তাঁদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই বিক্ষোভ তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভ্যুত্থান চক্রান্তের অংশ। তিনি তরুণদের এই বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়েছেন।
বিদ্যুৎ ও পানির সংকটকে কেন্দ্র করে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কারে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই বয়সে তরুণ, যাঁরা জেন-জি নামে পরিচিত।
তরুণদের ওই বিক্ষোভ রক্তক্ষয়ী রূপ নিলে গত সোমবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক ভাষণে সরকার ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা।
বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
বিদ্যুৎ ও পানির সংকটকে কেন্দ্র করে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কারে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই বয়সে তরুণ, যাঁরা জেন-জি নামে পরিচিত।
আন্দোলনে একটি ‘কৌশলগত’ বিরতির পর গতকাল শুক্রবার রাজধানী আন্তানানারিভোয় সড়কে নেমে আবার আন্দোলন শুরু করেন তরুণ বিক্ষোভকারীরা। জেন-জি প্রজন্মের বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
রিয়াল টিভি মাদাগাসিকারায় দেখানো ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, শুক্রবার রাজধানীতে বিক্ষোভকারীদের মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে।
ফেসবুক পাতায় দেওয়া এক ভাষণে রাজোয়েলিনা বলেন, ‘দেশ ধ্বংস করে কারও উপকার হবে না। আমি এখানে আছি, আমি এখানে দাঁড়িয়ে আপনাদের কথা শুনতে প্রস্তুত আছি, সাহায্যের হাত বাড়াতে প্রস্তুত আছি এবং…মাদাগাস্কারের (সংকটের) সমাধান খুঁজে পেতে প্রস্তুত আছি।’
প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, গত সপ্তাহে তিনি যখন জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক গিয়েছিলেন তখন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কিছু রাজনীতিক এই বিক্ষোভের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থানের চক্রান্ত করেছিলেন।
যদিও রাজোয়েলিনা তাঁর এই বক্তব্যের পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাননি। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের বলতে চাই, কিছু মানুষ আমাদের দেশকে ধ্বংস করতে চান।’
রাজোয়েলিনার এই ভাষণকে ‘অযৌক্তিক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন জেন-জি বিক্ষোভকারীরা। যদি প্রেসিডেন্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের দাবি মেনে না নেন, তবে তাঁরা সর্বাত্মক আন্দোলনে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন।
শুক্রবার রাজধানী ছাড়াও উত্তর উপকূলীয় শহর মাহাজাঙ্গা এবং দক্ষিণের শহর টলিয়ারা ও ফিয়ানারান্তসোতেও বিক্ষোভ হয়েছে।
আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত দ্বীপদেশ মাদাগাস্কার এই অঞ্চলের অন্যতম দরিদ্র দেশ। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে দেশটির তিন কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছিল।
‘দেশ ধ্বংস করে কারও উপকার হবে না। আমি এখানে আছি, আমি এখানে দাঁড়িয়ে আপনাদের কথা শুনতে প্রস্তুত আছি, সাহায্যের হাত বাড়াতে প্রস্তুত আছি এবং…মাদাগাস্কারের (সংকটের) সমাধান খুঁজে পেতে প্রস্তুত আছিআন্দ্রি রাজোয়েলিনা, মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট
জীবনযাত্রার মান ভালো করতে না পারায় অনেক মানুষ রাজোয়েলিনার সরকারকে দায়ী করছেন। বিশেষ করে বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়া ও পানির সংকটকে কেন্দ্র করে দেশটির সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে আছেন।
গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, গত কয়েক দিনে মাদাগাস্কারে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত বিক্ষোভকারী ও সাধারণ মানুষেরা আছেন। এ ছাড়া কেউ কেউ মারা গেছেন লুটপাট ও সহিংসতার সময়, যা বিক্ষোভের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।
তবে মাদাগাস্কারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে দেওয়া নিহতের ওই সংখ্যা সরকারি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়নি; বরং তা ‘গুজব বা ভুল তথ্য’র ওপর নির্ভর করে দেওয়া হয়েছে।
রিয়াল টিভি মাদাগাসিকারায় দেখানো ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, শুক্রবার রাজধানীতে বিক্ষোভকারীদের মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে।
বিক্ষোভের আয়োজকেরা বলেছেন, তাঁরা কেনিয়া, নেপাল ও মরক্কোর তরুণ নেতৃত্বের আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। আন্তানানারিভোর বিক্ষোভকারীরা এমন একটি পতাকা উঁচিয়ে ধরেছিলেন, যা চলতি মাসের শুরুতে নেপালে প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল। নেপালে ওই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।
রাজোয়েলিনা রাজধানী আন্তানানারিভোর সাবেক মেয়র। একটি বিক্ষোভের জেরে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্ক রাভালোমানানা ক্ষমতাচ্যুত হলে ২০০৯ সালে প্রথম মাদাগাস্কারের ক্ষমতায় বসেন রাজোয়েলিনা।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রাজোয়েলিনা ২০১৩ সালের নির্বাচনে অংশ নেননি। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জিতে তিনি আবার দেশটির ক্ষমতায় আসেন এবং ২০২৩ সালে পুনর্নির্বাচিত হন।