যানজটে ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা ৬

‘আমার সাধারণ যাত্রা দুঃস্বপ্নে পরিণত’

সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে গতকাল বৃহস্পতিবার খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিলাম। বিকেল পাঁচটায় অফিস শেষ করে রওনা দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, রাতের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছে যাব। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে সড়কের পরিস্থিতি আমার এই সাধারণ যাত্রাকে এক দুঃস্বপ্নে পরিণত করল।

খুলনা থেকে বের হওয়ার পরই বাসের গতি মন্থর হয়ে পড়ে। বেশ কিছু জায়গায় জমে থাকা পানির কারণে যান চলাচল প্রায় বন্ধ থাকলেও বাস চলছিল সহনীয় গতিতেই। পদ্মা সেতু পার হতে রাত সাড়ে ১০টা, আর ধোলাইপাড় হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে করতে রাত সাড়ে ১১টা বেজে গেল।

রাজধানীতে ঢোকার এই যাত্রা যেন এক যুদ্ধের নামান্তর হয়ে গেল। সায়েদাবাদ ও মানিকনগর এলাকায় পৌঁছাতেই যানজটের তীব্রতা চোখে পড়ল। বাসগুলো এমনভাবে আটকে গেল যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইঞ্জিন বন্ধ করে অপেক্ষা করতে হলো। কোথাও কোথাও পানির স্তর এত বেড়ে গিয়েছিল যে বাসের ভেতরে পানি ঢুকে ইঞ্জিন বিকল হওয়ার উপক্রম। অনেকে বাধ্য হয়ে বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা রিকশা ছেড়ে হাঁটতে শুরু করলেন। নারী, শিশু, বয়স্ক—সবাই পানিতে ডুবে থাকা সড়কে হাঁটছেন, এই দৃশ্য ছিল গতকালের।

অবশেষে রাত আড়াইটায় কোনোমতে উত্তরায় পৌঁছালাম, যেখানে স্বাভাবিক সময়ে রাত ১০টার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়ার কথা। এই দীর্ঘ, দুর্বিষহ যাত্রার জন্য দায়ী আমাদের নগরব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও অকার্যকর নিষ্কাশনব্যবস্থা। বৃষ্টি আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়, প্রতিবছরই এর দেখা মেলে। কিন্তু প্রতিবছরই কেন আমাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হবে?

উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, অপ্রতুল ড্রেনেজব্যবস্থা, আর সমন্বয়হীন ব্যবস্থাপনা নগরবাসীর জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আমরা উন্নয়ন চাই, তবে তা যেন মানুষের কষ্টের কারণ না হয়, বরং জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। পরিকল্পিত নগরায়ণ, আধুনিক নিষ্কাশনব্যবস্থা ও কার্যকর সড়কব্যবস্থাপনা ছাড়া এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও নগর পরিকল্পনাবিদদের কাছে আমার আকুল আবেদন, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দিকে মনোযোগ দেওয়া হোক। অন্যথায় প্রতি বর্ষায় এই দুর্ভোগই আমাদের নিয়তি হয়ে থাকবে।