মোট ঝরে পড়া ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেছেন, তাঁদের নেওয়া কোর্সটি প্রত্যাশা পূরণ করেনি বা অত্যধিক কঠিন ছিল। উচ্চশিক্ষা–পরবর্তী পর্যায়ে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে
মোট ঝরে পড়া ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেছেন, তাঁদের নেওয়া কোর্সটি প্রত্যাশা পূরণ করেনি বা অত্যধিক কঠিন ছিল। উচ্চশিক্ষা–পরবর্তী পর্যায়ে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে

ইউরোপে স্কুল–বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া সংকট: শীর্ষে নেদারল্যান্ডস

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোয় শিক্ষার্থী ঝরে পড়া বা ড্রপআউটের হার দেশভেদে ব্যাপকভাবে ভিন্ন। ইউরোস্ট্যাটের নতুন এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ইইউ নাগরিকদের মধ্যে মোট ১৪ শতাংশ জীবনের কোনো এক পর্যায়ে স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রশিক্ষণ মাঝপথে ছেড়ে দিয়েছেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে কোর্সের সঙ্গে প্রত্যাশার অমিল ও অতিরিক্ত কঠিন পাঠ্যক্রম। মোট ড্রপআউটের ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেছেন, তাঁদের নেওয়া কোর্সটি প্রত্যাশা পূরণ করেনি বা অত্যধিক কঠিন ছিল। উচ্চশিক্ষা–পরবর্তী পর্যায়ে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।

শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ায় শীর্ষে নেদারল্যান্ডস

শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হারে ইইউয়ে শীর্ষে রয়েছে নেদারল্যান্ডস। দেশটিতে প্রায় এক–তৃতীয়াংশ বা ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী একসময় পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছেন। এরপরেই রয়েছে ডেনমার্ক (২৭ শতাংশ) এবং তৃতীয় অবস্থানে লুক্সেমবার্গ (২৫ শতাংশ)।

অন্যদিকে আর্থিক সংকটকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তুলনামূলকভাবে কমসংখ্যক শিক্ষার্থী, মোটে ১০ শতাংশের কম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু কোর্স নির্বাচন নয়, মানসিক সহায়তা ও আর্থিক নিরাপত্তা জোরদার না করা গেলে ইউরোপজুড়ে শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ার এই প্রবণতা কমানো কঠিন হবে

বিপরীত চিত্র

তবে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে একধরনের বৈপরীত্য। যেসব দেশে সামগ্রিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার হার সবচেয়ে কম, সেসব দেশেই আর্থিক কারণে পড়াশোনা ছাড়ার হার তুলনামূলক বেশি।

ইইউয়ে সর্বনিম্ন ঝড়ে পড়ার (ড্রপআউট) হার রোমানিয়ায়। কিন্তু দেশটিতে যাঁরা পড়াশোনা ছেড়েছেন, তাঁদের ২২ শতাংশ জানিয়েছেন যে অর্থের অভাবে তাঁরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। রোমানিয়া শিক্ষা খাতে জিডিপির সবচেয়ে কম ব্যয়কারী দেশগুলোর একটি।

প্রতিবেশী বুলগেরিয়ার চিত্রও প্রায় একই। সেখানে সামগ্রিক ঝরে পড়ার হার মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হলেও এর মধ্যে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী আর্থিক সংকটকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা ইইউয়ে সর্বোচ্চ। সাইপ্রাসেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। দেশটির ঝরে পড়া হার চতুর্থ সর্বনিম্ন হলেও অর্থনৈতিক কারণে পড়াশোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে এটি ইইউয়ে তৃতীয় অবস্থানে।

ব্যক্তিগত কারণ ও কাজের চাপ

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত কারণে পড়াশোনা ছেড়েছেন। আবার ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা বাদ দিয়ে কাজে যুক্ত হতে চেয়েছেন। অসুস্থতা বা প্রতিবন্ধকতার কারণে পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ৮ শতাংশ।

নীরব ঘাতক মানসিক স্বাস্থ্য

যদিও ইউরোস্ট্যাটের তথ্যভান্ডারে মানসিক স্বাস্থ্য আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি, তবু এটি শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার বড় একটি অদৃশ্য কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকেরা। যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার ২৯ শতাংশের পেছনে ছিল মানসিক চাপ ও মানসিক অসুস্থতা, যা ছিল সবচেয়ে বড় কারণ।

হায়ার এডুকেশন পলিসি ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, মহামারির পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাকিত্ব, মানসিক দুর্বলতা ও ‘অন্তর্ভুক্তির অভাব’ বেড়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মানসিক দৃঢ়তা ও মোকাবিলার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে, যা সরাসরি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থী ধরে রাখার ওপর প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু কোর্স নির্বাচন নয়, মানসিক সহায়তা ও আর্থিক নিরাপত্তা জোরদার না করা গেলে ইউরোপজুড়ে শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ার এই প্রবণতা কমানো কঠিন হবে।