হংকংয়ে অনুশীলনে বাংলাদেশ দল
হংকংয়ে অনুশীলনে বাংলাদেশ দল

এশিয়ান কাপ বাছাই

হংকংয়ে জয়েই চোখ বাংলাদেশের

মার্চ থেকে অক্টোবর; শিলং থেকে ঢাকা কিংবা ভারত ম্যাচ থেকে হংকং ম্যাচ। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের গত তিন ম্যাচ। যেভাবেই বলা হোক না কেন, দেশের ফুটবলে এই সময়ের দৃশ্যগুলো আনন্দের সঙ্গে কিছুটা আক্ষেপেরও। কখনো শেষ মুহূর্তে পয়েন্ট হারানো, কখনো গোল মিসের হতাশা, আবার কখনো ভুলের মাশুল দেওয়া।

‎প্রতিটি ম্যাচেই আশা নিয়ে শুরুর পর হতাশায় ডুবতে হয়েছে সমর্থকদের। দিন শেষে আফসোস নিয়ে প্রশ্ন, ‘ইশ্‌, যদি একটা পয়েন্ট পাওয়া যেত!’, ‘একটা গোল হলে তো আমরাই জিততাম...’, ‘শেষ সময়ে গোলটা কিভাবে খেয়ে গেলাম!’ মাঝে দুটি প্রীতি ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে জয় আর নেপালের বিপক্ষে ড্র করা গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে ভালো ফুটবল খেলেও শেষটা ভালো করতে না পারার আক্ষেপেই পুড়তে হয়েছে বেশি।

আজ আবার হংকংয়ে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে জয়োৎসব করার সুযোগ জামাল ভুঁইয়া–হামজা চৌধুরীদের সামনে। দেশের ফুটবলের ‘মন খারাপ’ চেহারাটা বদলে দেওয়ার উপলক্ষও। হামজা–শমিত সোমরা লাল–সবুজ জার্সি গায়ে জড়ানোর পর ফুটবলে নতুন এক বাংলাদেশকে দেখছে সবাই। বছরখানেক আগেও দেশের ফুটবলপ্রেমীরা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসিতে মজেছিলেন। এখন তাঁদের মুখে মুখেই হামজার কথা। বাংলাদেশ দলের ম্যাচ দেখতে টিকিটের জন্য হাহাকার পড়ে যায়। ফুটবলের এমন সুসময়ে এখন শুধু জয়ের উৎসব করাটাই যেন বাকি।

হংকংয়ের বিপক্ষে জিততে পারবে তো বাংলাদেশ? সেই লক্ষ্যে অনুশীলনে নিজেদের প্রস্তুত করেছেন রাকিব–মোরসালিনরা

হংকংয়ের বিপক্ষে সেই জয়কেই আজ পাখির চোখ করছে বাংলাদেশ দল। হংকংয়ের কাই তাক স্পোর্টস পার্কে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টায় শুরু হবে ম্যাচ। ৫০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামে ভালোই চাপ সামলে লড়াই করতে হবে হাভিয়ের কাবরেরার দলকে।

বাংলাদেশ তার জন্য প্রস্তুতও। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া জানিয়েছেন, অ্যাওয়ে চ্যালেঞ্জ জয় করে আজ ৩ পয়েন্টই নিতে চান তাঁরা। ম্যাচের আগে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জামাল বলেন, ‘খেলার সময় দর্শকদের উপস্থিতি তেমন একটা টের পাওয়া যায় না। কারণ, তখন শরীরে অ্যাড্রেনালিনের (বিশেষ হরমোন) মাত্রা অনেক বেশি থাকে। ফলে মনোযোগ থাকে পুরোপুরি খেলায়। আমরাও এটা নিয়ে ভাবতে চাই না। আমরা ৩ পয়েন্টের জন্যই খেলব।’

তবে আজকের ম্যাচেও বাংলাদেশের চিন্তা বাড়াতে পারে আক্রমণভাগ। একজন নিখুঁত স্ট্রাইকারের অভাব সর্বশেষ হংকং ম্যাচেও টের পেয়েছে দল। কাবরেরা রাকিব হোসেনকে স্ট্রাইকার পজিশন খেলিয়েছেন। রাকিব বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করলেও কাজে লাগাতে পারেননি কোনোটিই। সরাসরি আক্রমণে প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙার দৃশ্যও দেখা যায়নি সে ম্যাচে। আক্রমণের দায়িত্বটা রাকিব-ফাহিমদের কাঁধে থাকলেও আজ তাই আলো ছড়াতে হবে শমিত সোম, হামজা চৌধুরী, জায়ান আহমেদ, ফাহমিদুল ইসলামদের। দিন শেষে তাহলে ৩ পয়েন্ট মিলতেও পারে।

‎এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ খেলছে ‘সি’ গ্রুপে। তিন ম্যাচে এক ড্রয়ে ১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ দল তাঁরা। শীর্ষে আছে হংকং। বাংলাদেশের সমান তিন ম্যাচ খেলে ৭ পয়েন্ট তাদের। ৫ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিঙ্গাপুর ও ২ পয়েন্ট নিয়ে তিনে ভারত।

শমিত সোমে তাকিয়ে বাংলাদেশ। পারবেন তো আশাপূরণ করতে

‎হংকংয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ৪-৩ গোলে হেরে যাওয়ার পর কাগজে-কলমে টিকে আছে বাংলাদেশ। বাকি তিন ম্যাচ জিতলেও মূল পর্বে জায়গা পাওয়া নিশ্চিত নয়। তৃতীয় রাউন্ড থেকে ছয় গ্রুপ–সেরা খেলবে এশিয়ান কাপে। সেই হিসাবে হংকং এগিয়ে। বাংলাদেশ শেষ তিন ম্যাচ জিতলেও হংকং আর সিঙ্গাপুরের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। আজকের পর ১৮ নভেম্বের ঢাকায় বাংলাদেশ খেলবে ভারতের বিপক্ষে। তৃতীয় ম্যাচ ৩১ মার্চ সিঙ্গাপুরের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের মাটিতে। পথটা কঠিন হলেও জামাল আশা ছাড়ছেন না, ‘এখনো তিন ম্যাচ আছে। এই তিন ম্যাচ থেকে আমরা ৯ পয়েন্ট পেতে পারি। আমাদের আশা আছে, এখনো বিশ্বাস করি, আমরা কোয়ালিফাই করব।’

কোচ কাবরেরাও সেভাবেই পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার শুরুর একাদশে শমিত ও জায়ান না থাকলেও আজ তাঁদের প্রথম থেকে খেলাতে পারেন এই স্প্যানিশ কোচ। রক্ষণভাগেও কাটাছেঁড়া হতে পারে। ঘরের মাঠে ৪ গোল হজম করা বাংলাদেশের রক্ষণভাগেও কিছু দুর্বলতা ধরা পড়েছে। গত কয়েক দিনের অনুশীলনে সেগুলো নিয়ে কাজ করেছেন বাংলাদেশ কোচ। আজ শুরু থেকে রক্ষণভাগে তারিক কাজী ও তপু বর্মণকে রাখতে পারেন কাবরেরা।

হংকংয়ের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলে চারটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। একটি ম্যাচ হয়েছে ড্র। সর্বশেষ ৯ অক্টোবর ৭ গোলের স্নায়ুচাপের লড়াইয়ে নৈপুণ্য দেখান হংকংয়ের দুই বিদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার ব্রাজিলিয়ান এভারটন কামারগো ও ফরাসি রাফায়েল মেরকিস। ৪ গোলের ৩টিই করে হ্যাটট্রিক করেছেন মেরকিস।

কাবরেরার ছকে খেলার অনুশীলন বাংলাদেশ দলের

হংকংয়ের শক্তি এই ‎বিদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলাররাই। বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে ২৩ জনের স্কোয়াডে ৯ জনই ছিলেন অন্য দেশে জন্ম নেওয়া ফুটবলার। আজকের ম্যাচেও তাঁরাই হংকং কোচ অ্যাশলি ওয়েস্টউডের ভরসার নাম। আগের ম্যাচে বাংলাদেশ কোচ কামারগোকে মার্কিং করে অনেকটা সফল হলেও মেরকিসকে আটকাতে পারেননি। তরুণ এই উইঙ্গার বেশ কয়েকবারই বাংলাদেশের রক্ষণ তছনছ করেছেন।

‎চীনের শীর্ষ লিগে খেলা ২৩ বছর বয়সী মেরকিস বল দখল, পাস ও খেলার গতি নিয়ন্ত্রণেও দারুণ দক্ষ। কামারগোও প্রতিপক্ষের জন্য বড় হুমকি। শারীরিকভাবে শক্তিশালী, গতি ও দিক পরিবর্তনে দুর্দান্ত, বল পায়ে থাকলে ডিফেন্ডারদের জন্য তিনি যেন দুঃস্বপ্নের অন্য নাম। মেরকিসের সঙ্গে হংকং জাতীয় দলের হয়ে ২০ ম্যাচে ১১ গোল করা এই ফরোয়ার্ডকেও আজ কড়া পাহারায় রাখতে হবে বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের।‎