ধীরে চলা

১৯ 

যখন তিনি তাঁর আসনে গিয়ে পৌঁছালেন, তখন কক্ষটিকে শাসন করছে নীরবতা। সম্ভবত, আরও ভালো হয়, যদি বলি, কয়েকটা টুকরা নীরবতা শাসন করছে রুমটিকে। চেক বিজ্ঞানী আবিষ্কার করলেন নীরবতার একটা প্রকার: আবেগজনিত নীরবতা। তিনি উপলব্ধি করলেন না, সোনাটা যেমন একটু একটু করে সুর বদলে ফেলে, ধীরে ধীরে অতি সূক্ষ্মভাবে, তেমনিভাবে এই আবেগজনিত নীরবতা পরিণত হয়েছে অস্বস্তিকর নীরবতায়। প্রত্যেকেই বুঝতে পারছেন, এই দাঁতভাঙা উচ্চারণের নামের মালিক ভদ্রলোকটি নিজে এতটাই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছেন যে তিনি তাঁর পেপার পড়তে ভুলে গেছেন, যে নিবন্ধ থেকে জানা যেতে পারত তাঁর নতুন মাছি আবিষ্কারের কাহিনি। এবং প্রত্যেকে এও বুঝছেন যে তাঁকে এখন সেটা পড়তে বলাটা ভদ্রতার বরখেলাপ হয়! দীর্ঘক্ষণের একটা দ্বিধাসংকুল বিরতির পর সভাপতি গলা খাঁকারি দিলেন, বললেন, ‘মসিয়েঁ চেকোচিপি, আপনাকে ধন্যবাদ।’ তিনি বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষা করলেন, বিজ্ঞানী যেন নিজে থেকেই মনে করতে পারেন তাঁর পেপার পড়ার কথা। ...এবার তিনি বললেন, ‘আমাদের পরের বক্তা হলেন’ ...এই পর্যায়ে নীরবতা ভেঙে গেল, শোনা গেল রুমের আরেক প্রান্ত থেকে আসা চাপা হাসি।

চেক বিজ্ঞানী ডুবে আছেন নিজের ভাবনার সমুদ্রে। তিনি কিছুই শুনছেন না। না হাসির শব্দ। না তাঁর সহকর্মীর বক্তৃতা। এই সময় পাশে বসা বেলজিয়ান বিজ্ঞানী তাঁকে ডাকলেন। তিনি জেগে উঠলেন অতল ধ্যান থেকে। তখনই তাঁর মনে পড়ল যে ও প্রভু, আমি আমার প্রবন্ধ পড়তে ভুলে গেছি! তিনি তাঁর পকেটে হাত ঢোকালেন, ওই তো তাঁর পাঁচটি পৃষ্ঠা পকেটে আছে, তার মানে তিনি স্বপ্ন দেখছেন না। তাঁর চিবুক জ্বালা করতে লাগল। নিজেকে মনে হচ্ছে হাস্যকর। কিন্তু তা সত্ত্বেও এর মধ্যে লজ্জার কিছু নেই, আপত্তিকর কিছু নেই, এর মধ্যে নেতিবাচক কিছু নেই। যে হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা তাঁর জীবনের বিষণ্নতা আরও বাড়িয়ে দিল, মনে হতে লাগল, এ হলো তাঁর নিয়তি। তাঁর ভাগ্যটাই এমন, দুঃখমাখা। এ কথা ভেবে পুরো পরিস্থিতিটা তাঁর কাছে মনে হতো লাগল মহত্তর, সুন্দরতর।

না। এই চেক বিজ্ঞানীর বিষাদ থেকে গৌরবকে কখনোই বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।

[১৯ নম্বর অধ্যায় চলে গেল। আমরা চেক বিজ্ঞানীকে নিয়েই পড়ে রইলাম। প্রিয় পাঠক, চলুন আমরা ২০ নম্বর অধ্যায়ে যাই। দেখি, আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে]
(চলবে)

আরও পড়ুন: