ধীরে চলা

২১
পতঙ্গবিদেরা গাড়ল হয়ে থাকে। এই মেয়েটিকে তারা উপেক্ষা করছে। মেয়েটি তাদের কথা মন দিয়ে শুনছে। যখন তার হাসা উচিত, হাসছে। যখন গম্ভীর হওয়া উচিত, হচ্ছে। নিশ্চিত যে সেই লোকগুলোকে চেনে না। তার হাসি তার মনের ভেতরের লজ্জাকে ঢাকার একটা উপায় মাত্র। ভিনসেন্ট উঠল, মেয়েটির টেবিলের দিকে গেল। তাদের দলে যোগ দিয়ে মেয়েটির সঙ্গে গল্প করতে লাগল। তারপর তারা দুজনে আলাদা হয়ে গেল। শুরু হলো রাজ্যের যত গল্প। মেয়েটির নাম জুলি। সে ছোট্ট একটা চাকরি করে। পতঙ্গবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যানের টাইপিস্ট। বিকেলে তার কোনো কাজ থাকে না। তাই সে এই বিখ্যাত ভবনে এসেছে। পতঙ্গবিদদের দেখবে বলে। গতকাল পর্যন্ত সে কোনো পতঙ্গবিদ দেখেনি। তারা তার কৌতূহলকে উসকে দিচ্ছে। যদিও সে তাদের আড়ালে পড়ে আছে এক ভীত হরিণীর মতো। ভিনসেন্ট মেয়েটির সঙ্গ উপভোগ করছে। তাকে গলা উঁচিয়ে কথা বলতে হচ্ছে না। বরং সে নিচু গলায় কথা বলছে, যাতে অন্যরা তা শুনতে না পায়। তারপর সে তাকে আরেকটা টেবিলে নিয়ে যায়। যাতে তারা পাশাপাশি বসতে পারে। সে তার হাত রাখে তার হাতে। 

সে বলে, ‘তুমি জানো, সবকিছু নির্ভর করছে কণ্ঠস্বরের শক্তির ওপরে। সুন্দর মুখের চেয়েও তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
‘তোমার গলা ভারি সুন্দর।’
‘তোমার তা মনে হয়?’
‘হ্যাঁ। তাই মনে হয়।’
‘কিন্তু দুর্বল!’
‘এটাই তোমার গলার সৌন্দর্য। আমার গলা বাজে, কাকের মতো কর্কশ! তোমার কি তা মনে হয় না?’
ভিনসেন্ট আদুরে গলায় বলে, ‘না। আমি তোমার গলার স্বর পছন্দ করি। এটা বেশ উসকানিমূলক। বেশ ভারিক্কিও।’
‘তোমার তাই মনে হয়?’
‘তোমার গলার স্বর তোমারই মতো।’ আদরমাখা গলায় ভিনসেন্ট বলে, ‘তুমি নিজে বেশ একজন মানুষ, যে অন্যকে জাগিয়ে তোলে। অন্যের শ্রদ্ধাও আকর্ষণ করে।’
জুলির এ কথা পছন্দ হয়। সে বলে, ‘আমিও সে রকমই ভাবি।’
ভিনসেন্ট বলে, ‘এই লোকগুলো গাড়ল।’
‘হ্যাঁ। ঠিক বলেছ!’
‘লোকদেখানো ভাব। বুর্জোয়া। বার্ককে দেখেছ? একটা গাধা।’
জুলিও তার কথায় সায় দেয়। লোকগুলো এতক্ষণ তাকে একদম পাত্তা দেয়নি। যেন তাকে তারা দেখেইনি। কাজেই এই লোকগুলোর বিরুদ্ধে যা কিছু বলা হবে, সে তাতেই সমর্থন দেবে। প্রতিশোধ নেওয়া হচ্ছে। ভিনসেন্টকে তার খুব ভালো লেগে যাচ্ছে। দেখতে ভালো। হাসিখুশি। কোনো দেখানেপনা নেই।
ভিনসেন্ট বলে, ‘আমার মনে হচ্ছে পুরো ব্যাপারটা লন্ডভন্ড করে দিই।’
খুব সুন্দর কথা। বিদ্রোহের প্রতিশ্রুতির মতো শোনাচ্ছে। জুলি হাসে। তার মনে হচ্ছে সে হাততালি দেয়।
ভিনসেন্ট বলে, ‘আমি তোমার জন্য হুইস্কি আনছি।’ সে উঠে বারের দিকে যায়।
(চলবে)

আরও পড়ুন: